২০ দিনেই শেষ এনসিপির ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’
বিএনপি-জামায়াতের বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতৃত্বে ৭ ডিসেম্বর তৈরি হয় গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। এতে যুক্ত হয় বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংষ্কার আন্দোলন ও আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি।
তিন দলের সেই জোটের মুখপাত্র ছিলেন এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম।
জোটের ঘোষণার সময় নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, আসনের লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন দলের অনেককেই নানা জোটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেসব অফার আসছে, আমরা সাদরে তা প্রত্যাখ্যান করি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। শুধু নির্বাচনি জোট নয়, এটি একই সঙ্গে রাজনৈতিক জোট। একসঙ্গে এবং একই মার্কায় জোটবদ্ধ নির্বাচন করব।
তবে জোট গঠনের ২০ দিনের মাথায় এনসিপি জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ৮ দলে যুক্ত হওয়ায় সংস্কার জোট ভেঙ্গে গেছে।
এ বিষয়ে এনসিপির জোটসঙ্গী বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'এনসিপি জামায়াতের সাথে জোট করায় আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট আর থাকছে না। আমাদের জোটের টার্গেট ছিল বিএনপি-জামায়াতের বাইরে একটি স্বতন্ত্র জোটের সংষ্কারপন্থী রাজনীতি। কিন্তু এনসিপি জামায়াতে যোগ দেওয়ায় সেটা আর হচ্ছে না। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবেই এই জোট আর থাকছে না।'
এর আগে, রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, আট দল একসঙ্গে ছিল। আর দুটি দল তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। এই দুটি দল হলো—এনসিপি ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি।
জামায়াতের আমির বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন আসনে সমঝোতা হয়েছে। আরও দল তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
এনসিপির নতুন জোট গঠন নিয়ে রাষ্ট্র সংষ্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম বলেন, 'তারা আমাদেরকে পরে জানিয়েছিল। তাদের আলোচনায় অগ্রগতির পরে। এই দলটি জোট গঠনের শুরুতেও বিড়ম্বনায় ছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের রাজনীতিতে আর কোনো সৌজন্যতার দৃষ্টান্ত থাকল না। আগেও এধরনের ঘটনা স্বাভাবিক ছিল।'
এদিকে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর প্রেস কনফারেন্স থেকে জানতে পারলাম, এনসিপি আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতের সাথে জোটবদ্ধ হয়েছে। গণতান্ত্রিক সংস্কার জোটের আত্মপ্রকাশের দিন জোটের মুখপাত্র ও এনসিপির আহ্বায়কের বক্তব্য অনুযায়ী তা হওয়ার কথা নয়। এমনকি তিন দলের একটি দল রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ইতোমধ্যে তাদের সাথে চুক্তিভঙ্গের কথা উল্লেখ করেছেন। এমনকি আনুষ্ঠানিকভাবে না জানিয়ে আসন সমঝোতার দিকে গেছে এনসিপি তাও উল্লেখ করেছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'তৃতীয় শক্তি তৈরির উদ্যোগকে ব্যাহত করে এমন অবস্থান জাতীয় নাগরিক পার্টির মূলধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পার্টির কিছু মানুষ কতিপয় আসনের বিনিময়ে ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, বিকাল ৫.৩০ মিনিটে এ দলের মূল আকাঙ্ক্ষা থেকে বিচ্যুত হলো।'
আট দলের জোটে যোগ দেওয়ার কারণ জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, 'শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে শহীদ করার ঘটনায় আমরা দেখলাম গণঅভ্যুত্থানের সময়ের খুনীরা এখনো সক্রিয়। তারা চেষ্টা করছে জুলাই প্রজন্মকে নিঃশেষ করার জন্য। তারা টার্গেট করছে আহত ও শহীদ পরিবারদের।'
তিনি আরও বলেন, 'এনসিপি নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। আমরা শুরু থেকে বলেছি এককভাবে নির্বাচনের অংশগ্রহণের কথা। ৩০০ আসনের প্রস্তুতি চলছিল আমাদের। এরপরে ৩টি দল মিলে জোট করেছিলাম। কিন্তু ওসমান হাদির ঘটনার কারণে আমাদের ভিন্ন চিন্তা করতে হয়।'
নাহিদ ইসলাম আরও যোগ করেন, নির্বাহী বডিতে আলোচনা করে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতেই আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখন কেউ দলে থাকবেন কি না সেটা একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সারাদেশে এনসিপির নেতৃবৃন্দ ঐক্যবদ্ধ আছে।'
এদিকে জামায়াত জোটে যাওয়ায় এনসিপির অভ্যন্তরে চলছে বিভাজন। দলটির ৩০ জন নেতা আপত্তি জানিয়ে আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বরাবর চিঠি দিয়েছেন। একইসঙ্গে দুজন নারী নেত্রী তাসনিম জারা ও তাজনূভা জাবীন পদত্যাগ করেন। এদের মধ্যে তাসনিম জারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে দলটির ১৩০ জন নেতা জামায়াতের সাথে জোট গঠনের পক্ষে নাহিদ ইসলামকে চিঠি দিয়েছেন।
পদত্যাগের পর এনসিপির যুগ্ম আহবায়ক তাজনূভা জাবীন বলেছেন, "অনেকে হয়তো ভাববেন, জামায়াতের ঐতিহাসিক কারণ বা নারী বিষয়ক কারণে আমি আপত্তি জানিয়েছি। কিন্তু, এটি এর চেয়েও ভয়ঙ্কর। কারণ, সেটা হল যে প্রক্রিয়ায় এটা হয়েছে। এটাকে রাজনৈতিক কৌশল, নির্বাচনী জোট ইত্যাদি নাম দেওয়া হচ্ছে। আমি বলব এটা পরিকল্পিত। এটাকে সাজিয়ে এ পর্যন্ত আনা হয়েছে।"
