নির্বাচন ও নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে রাজনীতিবিদ-বিশিষ্টজনদের গভীর উদ্বেগ
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড, পত্রিকা অফিস ভাঙচুরসহ সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনাবলির প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচন-পূর্ব ও নির্বাচনকালীন সময়ে সাধারণ নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা ।
রবিবার (২১ ডিসেম্বর) 'নির্বাচন ও নাগরিক নিরাপত্তা'- শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে উদ্বেগ উঠে আসে। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকটির আয়োজন করে নাগরিক কোয়ালিশন এবং সহ আয়োজক হিসেবে ছিল ভয়েজ ফর রিফর্ম ও বাংলাদেশ রিসার্চ অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ইনফরমেশন নেটওয়ার্কের (বিআরএআইএন) ।
গোলটেবিল বৈঠকে আলোকচিত্রী শহিদুল আলম বলেন, 'সরকার যদি গণমাধ্যম বা একজন প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ রাজনীতিবিদকে রক্ষা করতে না পারে, তাহলে সাধারণ মানুষ কীভাবে নিজেকে নিরাপদ ভাববে? হত্যার পর অপরাধীরা কীভাবে দেশ ছাড়ার সুযোগ পায়—এই প্রশ্নের উত্তর রাষ্ট্রকে দিতেই হবে।'
তিনি বলেন, 'ডেইলি স্টার, প্রথম আলো, ছায়ানট ও উদীচীর ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এগুলো দীর্ঘদিনের টার্গেটিংয়ের ফল। গণমাধ্যম নিরাপদ না হলে জনগণের প্রশ্ন তোলার আর কোনো জায়গা থাকে না।'
জাতিসংঘের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ দূত আইরিন খান বলেন, 'সরকারের প্রথম দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ তদন্ত। হাদি হত্যাকাণ্ড এবং গণমাধ্যমে হামলার পেছনে কে ছিল, সেটা জনগণকে জানাতে হবে। কনস্পিরেসি থিওরির জায়গা তৈরি হয় তখনই, যখন সরকার পরিষ্কারভাবে সত্য জানায় না।'
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে স্বাধীন গণমাধ্যম ও ভিন্নমতের সুরক্ষা দিতেই হবে। সব রাজনৈতিক দলের উচিত যৌথ ঘোষণা দেওয়া, তারা সহিংসতা উৎসাহিত করবে না এবং সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে।'
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা বলেন, ''প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব যদি বলতে বাধ্য হন 'মাটির নিচে ঢুকে যেতে চাই', তাহলে প্রশ্ন ওঠে কোন শক্তি সরকারকে আটকে রেখেছে? মাটির নিচে ঢুকে যাওয়ার দরকার নেই; পদত্যাগ করুন এবং বলুন আসলে কী ঘটেছে।"
তিনি বলেন, 'প্রথম আলো বা ডেইলি স্টারের লেখার সঙ্গে দ্বিমত থাকতে পারে, কিন্তু হামলা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। আপনি ভুল বললেও আপনার ভুল বলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, আমরা এমন বাংলাদেশ চাই।'
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, 'একদিকে হত্যাকাণ্ড, অন্যদিকে তার প্রতিক্রিয়ায় হামলা; সব মিলিয়ে নির্বাচন বাচালের একটি সুস্পষ্ট তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আজ মানুষের মুখে একটাই প্রশ্ন—ইলেকশন কি আদৌ হবে?'
তিনি বলেন, 'এই মুহূর্তে জানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ, আর অনেক ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকা রহস্যজনকভাবে নীরব।'
সরকার আসলে কাদের কথায় চলে সে প্রশ্নও রাখেন জোনায়েদ সাকি।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, 'বিগত সরকারের দেওয়া অস্ত্রের লাইসেন্সগুলো পুনর্বিবেচনা না করলে নির্বাচন ঝুঁকিতে পড়বে। অবৈধ অস্ত্রই আগামী নির্বাচনের সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সংকট তৈরি করবে।'
তিনি বলেন, 'বারবার সহিংসতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে গভীর ট্রমার মধ্যে ফেলছে। আমরা আর কোনো হাদি, আবরার বা আবু সাঈদকে হারাতে চাই না।'
আলোচনায় নির্বাচন ও নাগরিক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবি পার্টি থেকে ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, এনসিপি নেতা আকরাম হোসেন এবং আশরাফ মেহেদি, গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা রাশেদ খান, ইসলামি আন্দোলনের শাহ ইফতেখার তারিক প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন নাগরিক কোয়ালিশনের সহ সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর।
