শরিকদের জন্য আসন চূড়ান্ত করছে বিএনপি, শিগগিরই ঘোষণা
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে শরিক দলগুলোর জন্য আসন ছাড়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিএনপি। আলোচনার পর শিগগিরই আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
এ নিয়ে শরিকদের সঙ্গে বৈঠকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। ঘোষিত অন্তত তিনটি আসন পুনর্বিবেচনারও ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
সোমবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। আসন বণ্টনের আগে ধাপে ধাপে শরিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় গুলশানে দলীয় কার্যালয়ে প্রথম দফায় কয়েকটি শরিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শিগগিরই অন্য দলগুলোকেও আলোচনায় ডাকা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। বিএনপির একটি সূত্র বলছে, শরিকদের জন্য ২০–২২টি আসন ছাড়ার প্রস্তাব রয়েছে। কিছু আসনে ইতোমধ্যে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে, যেখানে শরিক দলগুলোর প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন।
১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা টিবিএসকে বলেন, "বিএনপির পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনার আমন্ত্রণ পাইনি। তবে শুনেছি আলোচনার উদ্যোগ আছে। আমন্ত্রণ পেলে অবশ্যই আলোচনায় বসব।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা দীর্ঘদিন বিএনপির সঙ্গে আন্দোলন করেছি, এখনো তাদের সঙ্গে আছি।"
এদিকে, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান টিবিএসকে বলেন, "বিএনপির সঙ্গে আমাদের ২০ বছরের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমাদের সাথে যোগাযোগেরও কিছু নেই, আর আমরাও বিএনপির যোগাযোগের অপেক্ষায় বসে নেই। তবু যদি আলোচনার ডাক দেয়, আমরা অবশ্যই আলোচনায় যেতে রাজি আছি।"
জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। প্রথম দফায় ৩ নভেম্বর ২৩৭ আসনে মনোনয়ন দেয় দলটি। পরদিন মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থিতা স্থগিত করা হয়। দ্বিতীয় দফায় ঘোষণা আসে আরও ৩৬ আসনে। এখনো দলটির ২৮টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়নি, যার বেশিরভাগই শরিকদের জন্য ধরে রাখা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফা ঘোষণার সময় অন্তত চার আসনে জোটের প্রত্যাশিত প্রার্থীরা মনোনয়ন না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে তিনটি আসনে পুনর্বিবেচনার বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে জানা গেছে। ওই ঘোষণার পরই লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বিএনপির সঙ্গে দুই দশকের রাজনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দেন।
আসন সমঝোতা বিলম্বে শরিকদের মধ্যে ক্ষোভও দেখা গেছে। তাদের অভিযোগ, ১৫ বছর ধরে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাঠে থাকার পরও আলোচনা ছাড়া একতরফাভাবে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় সক্রিয় নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও অনেক জায়গায় জোটের প্রার্থীদের বাদ দিয়ে নিজেদের প্রার্থী মনোনীত করেছে দলটি।
যে তিন আসনে প্রার্থী পুনর্বিবেচনার আভাস
কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে ১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে আগে থেকে মাঠে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছিল বিএনপি। দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতার জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় দফায় এ আসনে শেখ মজিবুর রহমান ইকবালকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এই আসনে পুনর্বিবেচনার আভাস মিলেছে।
নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন তিনি। এবারের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন বলে দলীয়ভাবে প্রত্যাশা ছিল। তবে দ্বিতীয় ধাপে এ আসনে মো. মনিরুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয় বিএনপি। এখানেও প্রার্থী পুনর্বিবেচনার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঝালকাঠি-১ আসনে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি এ আসনে রফিকুল ইসলাম জামালকে মনোনয়ন দেয়। এ আসনটিও পুনর্বিবেচনার তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া, গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ঢাকা-৬ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য প্রস্তুতি নিলেও এবার তাকে আসন ছাড় দেয়নি বিএনপি। ২০১৮ সালে এ আসনটি ছাড় দেওয়া হয়েছিল তার জন্য। এবার আলোচনা ছিল তাকে ঢাকা-৭-এ সমর্থন দেওয়া হতে পারে, তবে শেষ পর্যন্ত বিএনপি এ আসনে হামিদুর রহমানকে টিকিট দেয়। জানা গেছে, দলটি সুব্রত চৌধুরীকে সংসদের উচ্চকক্ষে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
শরিকদের জন্য ফাঁকা রাখা আসন
বিএনপি কয়েকটি আসনে শরিকদের সবুজ সংকেত দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৭ আসনে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, কুমিল্লা-৭ আসনে এনডিএম মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং ঝিনাইদহ-২ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।
