জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণিল আয়োজনে প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত
'উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি'- এই স্লোগানে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আয়োজিত দিনব্যাপী প্রজাপতি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) বেলা ১০টায় জাবির জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে ১৫তম প্রজাপতি মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
মেলা উপলক্ষে সকাল থেকে বাড়তে থাকে দর্শনার্থীদের আনাগোনা। অভিভাবকদের সঙ্গে নানা জায়গা থেকে আসে শিশু-কিশোরেরা। কেউবা ফেস্টুন হাতে, কেউ পড়েছিল মুখোশ, কেউবা পড়েছে প্রজাপতির মতো রঙিন জামা। কেউ কেউ আবার ব্যস্ত গালে প্রজাপতির ছবি আঁকা প্রতিচ্ছবি নিয়ে।
তরুণ-তরুণীরা এসেছিলেন শাড়ি ও পাঞ্জাবি পড়ে। এছাড়া স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরাও প্রজাপতি মেলায় অংশগ্রহণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মেফতাউল জান্নাতের সঙ্গে প্রজাপতি মেলা দেখতে আসে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহিয়াতুল আরিশা দুয়া।
দুয়া বলে, 'এবারে প্রথম বারের মতো প্রজাপতি মেলা দেখতে এসেছি, লাল, নীল রঙের প্রজাপতি দেখে আমার অনেক ভালো লাগছে।'
মেলায় দিনব্যাপী অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতিবিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি ও প্রকৃতিবিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী, প্রজাপতিবিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতাসহ নানা আয়োজন।
এছাড়া মেলা উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও প্রজাপতির গল্পে পাপেট শো'র আয়োজন করা হয়।
প্রকৃতি সংরক্ষণে সার্বিক অবদানের জন্য এবারের প্রজাপতি মেলায় বিশিষ্ট বন্যপ্রাণী বিশারদ ও সংরক্ষণবিদ ড. আলী রেজা খানকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, যৌথভাবে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শাহারিয়ার রাব্বি তন্ময় ও নূরে আফসারী (জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী)।
এছাড়াও মেলায় 'বাটারফ্লাইস অফ বাংলাদেশ'- বইয়ের তৃতীয় সংস্করণ উন্মোচিত হয়। বইটিতে ৩৬০টি প্রজাপতির প্রজাতির ছবিসহ প্রজাপতির বায়োলজি ও শনাক্তকারী জিনভিত্তিক তথ্য রয়েছে।
২০১০ সাল থেকে 'উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি'- স্লোগানে প্রজাপতি সংরক্ষণ ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রজাপতি মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের কীটতত্ত্ব শাখা।
উদ্বোধনকালে উপাচার্য বলেন, 'প্রজাপতির কাছ থেকে মানুষের শেখার আছে। প্রজাপতি পরাগায়ণের মাধ্যমে কোনো প্রকার ক্ষতি ছাড়াই আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ধর্ম, বর্ণ ও বৈচিত্র্যভেদে মানুষের কাছেও সব মানুষ নিরাপদ হতে হবে। প্রজাপতির কাছ থেকে গোটা বিশ্বকে নিরাপদ রাখার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে মানুষকে। সব ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে হবে।'
মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, 'আমরা একটা বই প্রকাশনা করছি। এই বইটির মাধ্যমে প্রজাপতি সংরক্ষণে আমাদের যে ভূমিকা, সেটি অনেক দূরেই এগিয়ে যাবে। আপনারা দেখবেন যে সারাবিশ্বে মলিকুলার ডাটা একটা মানুষ মরে গেলে তার জিন দিয়ে শনাক্ত করতে হয়। এই প্রজাপতি শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণিবিদ্যা বিভাগ আমরা মলিকুলার ডাটা তৈরি করেছি। যে ডাটা দিয়ে আমরা প্রজাপতিকে শনাক্ত করব।'
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সোহেল আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
