২০টির বেশি আসনে দলীয় নেতৃত্বের বাইরের প্রার্থী দিতে পারে জামায়াত; থাকবেন আরও সংখ্যালঘু প্রার্থী
খুলনা-১ (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) আসনে দলের ডুমুরিয়া উপজেলা হিন্দু কমিটির সভাপতি কৃষ্ণ নন্দীকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
এর মাধ্যমে অমুসলিম, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী, নারী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, গণঅভ্যুত্থানে আহত ব্যক্তি, শহীদ পরিবারের সদস্য ও ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি-জিএসসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করল দলটি।
জানা গেছে, ২০টিরও বেশি আসনে জামায়াতের ব্যানারে নির্বাচনি লড়াইয়ে নামতে পারেন দলীয় নেতৃত্বের বাইরের প্রার্থীরা। নির্বাচনের জন্য দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকায় পরিবর্তন আনতে কাজ করছে দলের একটি নির্বাচন টিম।
গত সোমবার হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করেছে দলটি। সেখানে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা আমিরকে পরিবর্তন করে সাংবাদিক অলিউল্লাহ নোমানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ছিলেন।
গত ২৮ নভেম্বর এক সমাবেশে অমুসলিমদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যের পর কৃষ্ণ নন্দীর এই মনোনয়ন এল। ওই সমাবেশে জামায়াত আমির বলেছিলেন, 'আপনারা নিরাপদে থাকবেন যদি আমরা বাংলাদেশ পরিচালনার সুযোগ পাই। আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর হয়েও তাদের কেউ কেউ সংসদ সদস্য পদে লড়াই করবেন। এর মাধ্যমে আমরা জাতিকে ঐক্যের জায়গায় আনতে চাচ্ছি। বিভেদের পথরেখার কবর রচনা করছি।'
গতকাল রাতে টিবিএসকে কৃষ্ণ নন্দী বলেন, 'আজ বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে আমার প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে। আমি আগামীকাল থেকে নির্বাচনি মাঠে কাজ করা শুরু করব।'
কৃষ্ণ নন্দী বলেন, তিনি ২০০৭ সাল থেকে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তম; বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দমন-পীড়নের সময়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন।
জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের টিবিএসকে বলেন, তারা চলতি সপ্তাহের মধ্যেই দলের বাইরে অমুসলিম, নারী, সুশীল সমাজ ও উপজাতিদের মধ্য থেকে প্রার্থী নির্ধারণে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশ পরিচালনার জন্য দলটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রার্থী তালিকা দেওয়ার চেষ্টা করছে।
কতগুলো আসনে এ ধরনের প্রার্থী আসতে পারে—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'সেটি এখনো সুনির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। যাচাই-বাছাই চলছে, বৈঠক করে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।'
জামায়াত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাগুরা-২ আসনে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মাগুরা জেলা অমুসলিম শাখার সভাপতি শ্রী পরেশকান্তি সাহা, মাগুরা-১ আসনে সদর হাসপাতালের চিকিৎসক সুশান্ত কুমার বিশ্বাস, পঞ্চগড়-১ আসনে স্থানীয় শিক্ষক শ্রী তপনমোহন চক্রবর্তী ও হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ্রী গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিকের নাম আলোচনায় আছে।
এছাড়াও নারীদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি অধ্যাপক নুরুন্নিসা সিদ্দিকা, বুয়েটের শিক্ষক মারদিয়া মমতাজ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি ডা. আমিনা রহমান, সাবেক এমপি শাহান আরা বেগম এবং মহিলা বিভাগের সহকারী সেক্রেটারি ব্যারিস্টার সাবিকুন্নাহারকে সংসদ নির্বাচনের জন্য বিবেচনা করছে দলটি।
দলের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি নির্বাচনি টিম প্রার্থী নির্ধারণে কাজ করছে। এই টিমের দুই সদস্য নায়েবে আমীর সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদকে নিয়ে গত ৪ নভেম্বর আরেকটি কমিটি গঠন হয়। এই টিম জামায়াতের সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলের নির্বাচনি কাঠামো ও সমঝোতার রূপরেখার জন্য কাজ করবে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তারা আন্দোলনে যুক্ত আটটি শরিক দল এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করে ৩০০টি আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করবে।
মঙ্গলবার সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ টিবিএসকে জানান, তারা প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, দলীয় নেতাকর্মীদের বাইরে ১৫ থেকে ২০ কিংবা তার চেয়েও বেশি প্রার্থী মনোনয়ন পেতে পারেন।
জামায়াত নেতৃবৃন্দ জানান, এসবের বাইরেও সারা দেশের প্রাথমিক তালিকায় পরিবর্তন আসবে। ইতিমধ্যে গাজীপুর-৬ আসনে প্রার্থী পরিবর্তন করে সাবেক শিবির নেতা হাফিজুর রহমান ও লালমনিরহাট-৩ আসনে নতুন প্রার্থী এডভোকেট আবু তাহেরকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
