নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভাতা বাড়াচ্ছে ইসি, কঠোর হচ্ছে আচরণবিধি: ইসি সচিব
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভাতা ও আর্থিক সুবিধা বাড়ানোসহ স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছ থেকে আপ্যায়ন বা আতিথ্য গ্রহণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ।
তিনি বলেন, "একটা কথা বারবারই শুনছি—যারা নির্বাচনের দায়িত্ব পালন করেন, তারা অনেক সময় স্থানীয় প্রভাবশালীদের আতিথেয়তা গ্রহণ করেন। এটি যেন কোনোভাবেই না হয়, আমরা এবার সে বিষয়ে কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
তিনি বলেন, "এ জন্য মূল যে পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছে তা হলো তাদের ভাতার পরিমাণ বাড়ানো এবং নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা, যাতে তারা কারও ওপর নির্ভরশীল না হন। পাশাপাশি রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার—যারা দায়িত্বে থাকবেন—তাদেরও স্পষ্ট ভূমিকা ও নিয়ন্ত্রণ এখানেই প্রযোজ্য।"
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শান্তিশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, ঋণখেলাপি সংক্রান্ত তথ্য ব্যবস্থাপনা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত, আগাম পোস্টার–ব্যানার অপসারণসহ অন্তত ২২টি বিষয়ে সচিবদের সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
রোববার (৩০ নভেম্বর) বেলা ৩টায় ইসি ভবনে এ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসিরউদ্দিন সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিটি ভোটকক্ষে দুটি করে গোপন কক্ষ
ইসি সচিব জানান, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনে বড় পরিসরের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে মাঠ প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় জোরদার করা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, একটি ভোটকক্ষে দুটি গোপন কক্ষ (স্ট্যাম্পিং বুথ) রাখার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির, যাতে ভোট দেওয়ার সময় কমে এবং ভোটারদের প্রবাহ বজায় থাকে।
"মক ভোটিংয়ের প্রাথমিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে—ভোটকেন্দ্র বাড়ানোর প্রয়োজন নাও হতে পারে; তবে প্রতিটি বুথে গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়াতে হতে পারে," বলেন তিনি।
সাধারণত একটি ভোটকক্ষে একটি গোপন স্ট্যাম্পিং কক্ষ থাকে। ইসির সিনিয়র সচিব বলেন, প্রতিটি বুথে দুটি কক্ষ রাখার ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা নেই।
নির্বাচন, গণভোট ও প্রবাসী ভোট—এই তিন বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ইসি সচিব বলেন, "আগামী জাতীয় নির্বাচন, একযোগে গণভোট এবং বিদেশে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের ভোটাধিকার—এই তিনটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই পুরো প্রস্তুতি পরিকল্পনা সাজিয়েছে নির্বাচন কমিশন।"
ইসি সচিব আরও বলেন, "যেসব বিষয়কে প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো—গণভোটের প্রচারণা, দেশের বাইরে অবস্থানরত ভোটারদের নিবন্ধন, আচরণবিধি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অপব্যবহার রোধ এবং ভোটার শিক্ষা। এসব বিষয়ে সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।"
ব্যালট মুদ্রণ ও পোস্টাল যাচাই কার্যক্রম চলছে
ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, জাতীয় নির্বাচনের ব্যালট পেপার দেশের সরকারি প্রেসগুলোতে ছাপা হচ্ছে, আর প্রবাসী ভোটের ব্যালট পেপার ছাপা হচ্ছে সেনাবাহিনী পরিচালিত সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে।
ডাক বিভাগকে তেজগাঁও ও বিমানবন্দর সর্টিং সেন্টার পরিদর্শনের ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গণভোট, আউট-অফ-কান্ট্রি ভোটিং, এআই–এর অপব্যবহার প্রতিরোধ ও ভোটার শিক্ষা—এসব বিষয়ে প্রচারণা বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে মাইকিং, স্থানীয় প্রচারণা ও টিভি কভারেজ বাড়ানোরও অনুরোধ করেন ইসি সচিব।
তিনি আরও বলেন, "চূড়ান্ত সময় পর্যালোচনা ও ভোটের তারিখ ঘোষণার পরই মূল প্রস্তুতিমূলক কাজ গতি পাবে। নতুন চ্যালেঞ্জ এলে তা পর্যায়ক্রমে সমাধান করা হবে।"
নির্বাচন সংক্রান্ত তথ্য বা অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি সমন্বয় কেন্দ্র (কোঅর্ডিনেশন পয়েন্ট) করা হচ্ছে বলে জানান ইসি সচিব।
তিনি বলেন, "একটি কোঅর্ডিনেশন পয়েন্টের কথা ভাবা হয়েছে, যেখানে নির্বাচন কমিশন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা থাকবেন। প্রয়োজনে আইসিটি বা অন্য কোনো মন্ত্রণালয়ও যুক্ত হতে পারে।"
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঋণখেলাপিরা যাতে অংশ নিতে না পারে, সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সৌদি আরবসহ ৭ দেশে পুনরায় চালু প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে 'পোস্টাল ভোট বিডি' মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে সৌদি আরবসহ ৭ দেশে প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম পুনরায় চালু হয়েছে।
২৭ নভেম্বর থেকে বন্ধ থাকা এ নিবন্ধন রোববার বিকাল সোয়া ৩টা থেকে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, কুয়েত ও মালয়েশিয়ায় আবার শুরু হয়েছে।
ইসি সচিব জানান, "কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে কয়েকটি দেশের প্রবাসীদের নিবন্ধন প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছিল। তাদের দেওয়া তথ্য আমাদের নির্ধারিত ফরম্যাটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না। বিষয়টি দৃশ্যমান হওয়ার পর নিবন্ধন বন্ধ করে সমস্যাটি সমাধান করা হয়েছে। যারা ইতোমধ্যে নিবন্ধন করেছেন, তাদের সঙ্গে ওয়ান–টু–ওয়ান যোগাযোগ করে সমস্যা উত্তরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।"
তিনি বলেন, "অনেকে দাবি করেছিলেন ঠিকানা বা কিছু তথ্য সংশোধনের ব্যবস্থা আগে ছিল না—যাকে আমরা আইটি ভাষায় বলি 'এডিট মোড'। এবার সেই এডিট মোড যুক্ত করা হয়েছে। ফলে ভুল তথ্য সংশোধন বা প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুযোগ আগের তুলনায় অনেক বেশি।"
ইসি সচিব জানান, প্রবাসীদের ভোটের জন্য নিবন্ধন অ্যাপ এখন পর্যন্ত ডাউনলোড করেছেন ২ লাখ ১০ হাজারের বেশি ব্যবহারকারী এবং নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে প্রায় এক লাখ।
তিনি বলেন, "১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিবন্ধনের সময় রয়েছে, ফলে নিবন্ধনের সংখ্যা আরও বাড়বে।"
