এনসিপির অনাগ্রহে স্থবির জোট গঠন প্রক্রিয়া, প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে জোটে রাজি নয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা
বিএনপি ও জামায়াত ইসলামির বাইরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে নতুন একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়াতে দলটির নির্বাহী কমিটির বৈঠকে অনাগ্রহ দেখিয়েছেন নেতাকর্মীরা। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে জোট গঠনে সম্মতির কথা জানালেও, কোনো প্ল্যাটফর্মের সাথে জোটে যেতে রাজি হয়নি এনসিপির নির্বাহী কমিটির সদস্যরা।
যদিও জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় জড়িত দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছে আলাপ-আলোচনা চলমান রয়েছে, একটু দেরি হলেও জোট গঠনের ব্যাপারে আশাবাদী তারা।
গতকাল বুধবার (২৬ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে চার ঘণ্টা ধরে এনসিপির নির্বাহী কাউন্সিলের সভা হয়। ৫১ সদস্যের নির্বাহী কাউন্সিলের অধিকাংশ সদস্য সভায় অংশ নেন।
সেখানে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃত্বে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ) ও রাষ্ট্র সংষ্কার আন্দোলন নিয়ে জোট গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত ছিল। এর বাইরে গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (রব) নিয়ে জোট গঠনের আলোচনা হয়।
তবে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নূরুল হক নূর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, 'এই মুহূর্তে আমরা জোট গঠন নিয়ে ভাবছি না। যেহেতু নির্বাচনের তফসিল দ্রুতই হবে, তাই জোট গঠনের সেই সময়টাও নেই। এর বাইরে আমরা বিএনপির সাথে দীর্ঘদিন যুগপৎ আন্দোলন করেছি। তাদের সাথে আমাদের আসন সমঝোতা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।'
তিনি বলেন, 'বিএনপির সাথে আলোচনা চলমান আছে। বিএনপি আমাদের সাথে না নিলে আমরা এককভাবে নির্বাচনের কথা ভাবছি। এনসিপির সাথে জোট নিয়ে আপাতত চিন্তা নেই।'
এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার ফুয়াদ টিবিএসকে বলেন, 'জোট ঘোষণার বিষয় চূড়ান্ত হয়নি। তবে আলোচনা এখনো চলমান রয়েছে।'
এনসিপির নির্বাহী মিটিং শেষে একাধিক নেতা টিবিএসকে জানান, সভায় তৃতীয় একটি জোট গঠনের বিষয়ে সকলের একমত আছে। তবে সেটি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে, বিশেষ কোনো প্ল্যাটফর্মের সাথে না। এছাড়াও, জোটের আত্মপ্রকাশ কবে হবে সে ব্যাপারেও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মূলত ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)-এর সাথে জোট গঠনের ব্যাপারে তাদের অনেকের আপত্তি আছে।
এ বিষয়ে আপ বাংলাদেশ-এর আহ্বায়ক আলী আহসান জোনায়েদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমরাই আলাপ আলোচনা করে জোট গঠনের প্রক্রিয়া গুছিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্ব সম্মতিও দিয়েছিলো। কিন্তু এখন কিছু কারণে জোট গঠনের প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে। তবে সব দল আন্তরিক আছে, আলাপ আলোচনা চলমান আছে।'
এর আগে গত মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) রাতে এনসিপির কার্যালয়ে দলটির মুখ্য সংগঠক নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, 'খুব শিগগিরই বিএনপি–জামায়াত জোটের বাইরে আরেকটি নতুন অ্যালায়েন্স দেখতে পাবে দেশবাসী। এই জোট জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে।'
পাটওয়ারী বলেন, 'ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ, চাঁদাবাজবিরোধী এই জোট ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে। যারা সংস্কারের পক্ষে, নারীদের পক্ষে, আলেম-ওলামাদের পক্ষে এবং দুর্নীতি–সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে।'
বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম টিবিএসকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত চারটি দল মোটামুটি চূড়ান্ত হয়েছে। এর বাইরে গণ অধিকার পরিষদ ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে আলাপ আলোচনা চলমান রয়েছে। কিন্তু এনসিপি তাদের অভ্যন্তরীণ মিটিংয়ে এখনো সেটি পাশ করতে পারেনি। তবে চেষ্টা চলমান আছে। মূলত আপ বাংলাদেশ নিয়ে তাদের আপত্তি আছে।'
হাসনাত কাইয়ূম আরও বলেন, 'আমরা গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বের হয়েছি। এখন আমরা রাজনীতিতে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে একটি তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছি, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে। আমাদের আলোচনা চলমান আছে। জোটের আত্মপ্রকাশ, নেতৃত্ব ও উদ্দেশ্য নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হবে।'
তবে এই জোট গঠনের তৎপরতা নিয়ে এনসিপির ভেতরে ও বাইরে আলোচনা এবং সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে এনসিপির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্র শক্তির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আবু তৌহিদ মো. সিয়াম ফেসবুকে লিখেছেন, 'এনসিপির মাথায় রাখা উচিত তাদের জন্ম হয়েছে ৭১ পরবর্তী এই অঞ্চলের সবচেয়ে বিগ ইভেন্টের ফলাফল হিসেবে। তাদের সাংগঠনিক অবস্থান দুর্বল হতে পারে। কিন্তু যেই ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে তারা, সেরকম মজবুত ভিত্তি বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের নেই।'
তিনি আরও লেখেন, 'এরপরও যদি এনসিপি মওদুদীবাদীদের প্রক্সির খপ্পরে পড়তে চায়, সেইটার মতো আত্মঘাতী আর কিছু হতে পারে না। আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের হতাশ করবেন না। আমাদেরকে আবার রাজনীতির দুষ্টচক্রে ঠেলে দিয়েন না। আপনারা সাহস দেখান, আমরা আমাদের জীবন দিয়ে দিব।'
আবু তৌহিদ মো. সিয়ামের ফেসবুক পোস্টে সাবেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের মন্তব্য করেন, 'দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, তোমার-আমার জীবন দেওয়া না দেওয়া ওদের কাছে কোনো ম্যাটার করে না। করবেও না। ওরা গুটিকয়েকজন নির্দিষ্ট একটা লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আগাচ্ছে, যেটার সাথে নির্দিষ্ট কিছু মানুষের স্বার্থই কেবল জড়িত।'
