আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন কমিশন
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তফসিল ঘোষণার আগে আবারও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আজ (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় এ বৈঠক শুরু হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এতে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, ইসি সচিবসহ বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও প্রাক-প্রস্তুতিমূলক এই বৈঠকে ভোটের নিরাপত্তা, বাহিনী মোতায়েন পরিকল্পনা, মাঠপর্যায়ের সমন্বয় ও নির্দেশনা চূড়ান্ত করা হবে।
তফসিল ঘোষণাকে ঘিরে নিরাপত্তা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ প্রায় দুই ডজন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এসব সংস্থার তথ্য ও সুপারিশের ভিত্তিতেই ভোটের তফসিল ও তারিখ চূড়ান্ত করতে পারে ইসি।
বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাজেট নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা রাখতে চায় ইসি
নির্বাচনে ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকের কার্যপত্রে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত ও আইনের আওতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে কার্যকর মনিটরিং নিশ্চিত করতে চায় ইসি।
এক্ষেত্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওপরই থাকবে। বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
আলোচনায় আরও যা থাকছে
বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—
অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার রোধ ও নিয়ন্ত্রণ; বৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের ওপর নিষেধাজ্ঞা; মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে প্রতীক বরাদ্দ পর্যন্ত সময়কালে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বাড়তি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন; সারাদেশ থেকে পোস্টার, ব্যানার, গেট ও তোরণ অপসারণ; নির্বাচন-পূর্ব, নির্বাচনকালীন ও নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ।
এ ছাড়া ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্র ও নির্বাচনি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার; আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কার্যক্রমে সমন্বয়; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; নির্বাচনি দ্রব্যাদি পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিতরণে নিরাপত্তা; পার্বত্য ও দুর্গম এলাকায় নির্বাচনি সরঞ্জাম পরিবহন এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের জন্য হেলিকপ্টার সহায়তা প্রদান—এসব বিষয়ও আলোচনায় আসবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা, সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এবং মাঠপর্যায়ের নির্বাচন অফিসগুলোর নিরাপত্তা জোরদার; নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইলেক্টোরাল ইনকোয়ারি কমিটির দায়িত্ব পালনে পুলিশ নিয়োজিতকরণ; নির্বাচনি আইন ও বিধিনিষেধ প্রতিপালনে করণীয় নির্ধারণ; নির্বাচনকালীন সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের পরিকল্পনা; গোয়েন্দা সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার পদক্ষেপ; বিদেশি সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা; অবৈধ অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ; গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে সিসিটিভি স্থাপন ও মনিটরিং—এগুলোও বৈঠকের এজেন্ডায় রয়েছে।
পোস্টাল ভোটিং (OCV–ICPV) ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং সামাজিক মাধ্যমে ভুল ও মিথ্যা তথ্য প্রতিরোধে প্রযুক্তি ব্যবহারের কৌশল প্রণয়ন; ড্রোন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ এবং বাজেটসংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনায় উঠবে।
ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আলাদা ব্যবস্থা
বুধবার বিজিবির নির্বাচনি মহড়া পরিদর্শন শেষে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, "ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেড, ইয়েলো ও গ্রিন জোনে ভাগ করে সে অনুযায়ী ডেপ্লয়মেন্ট স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ২৭ নভেম্বরের (আজ) বৈঠকে এ স্ট্র্যাটেজি চূড়ান্ত হবে।"
এবার জাতীয় সংসদ ও গণভোটে ভোট দেবেন দেশের প্রায় পৌনে ১৩ কোটি ভোটার। সারা দেশে প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্রে প্রায় পৌনে তিন লাখ ভোটকক্ষ থাকবে।
এর আগে, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম দফা প্রাক-প্রস্তুতিমূলক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত ২০ অক্টোবর। সেখানে ভোটের আগে-পরে মোট ৮ দিন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের প্রস্তাব আসে। এ নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ১৩ থেকে ১৮ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
মোট ৭ লাখের বেশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন। এর মধ্যে আনসার–ভিডিপি সদস্য থাকবেন প্রায় সাড়ে ৫ লাখ, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য ৯০ হাজারের বেশি। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও কোস্টগার্ডও মাঠে থাকবে।
পরবর্তী বৈঠক ও তফসিল ঘোষণা
ভোটের দুই সপ্তাহ আগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আরেকটি বৈঠক হবে। ইসির অনুমোদন (ভেটিং) শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মোতায়েন সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করবে।
আজকের আইন-শৃঙ্খলা বৈঠক, ২৯ নভেম্বর দুই নির্বাচনের মক ভোটিং এবং ৩০ নভেম্বর আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হবে। ভোটার তালিকার সিডি, মনোনয়নপত্র এবং আরপিও-বিধিমালা মুদ্রণের কাজ শেষ করে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিতে চায়। সম্ভব হলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণা করার পরিকল্পনা রয়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে দুই নির্বাচন একদিনে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত আছেন মেজর জেনারেল আব্দুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ, মহাপরিচালক আনসার–ভিডিপি; মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, মহাপরিচালক ডিজিএফআই; মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী, মহাপরিচালক বিজিবি; এ কে এম শহিদুর রহমান, মহাপরিচালক র্যাব; মো. গোলাম রসুল, প্রধান, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি); মো. ছিবগাত উল্লাহ, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক, সিআইডি এবং ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী।
