নির্বাচনী প্রচারণায় পোস্টার-ড্রোন ব্যবহার ও অসৎ উদ্দেশ্যে এআই নিষিদ্ধ
বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে এবারই প্রথম ভোটের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি ড্রোন, অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার এবং বিদেশে প্রচারণায়ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
সোমবার (১০ নভেম্বর) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে 'রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি, ২০২৫' জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
বিধিমালা অনুযায়ী, একজন প্রার্থী তার সংসদীয় আসনে সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন, যার দৈর্ঘ্য ১৬ ফুট ও প্রস্থ ৯ ফুটের বেশি হবে না। প্রচারের সময় শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের মধ্যে রাখতে হবে।
আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড, দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং দলের জন্যও সমপরিমাণ অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্ত শেষে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির।
অনলাইন প্রচারণায়ও বিধিনিষেধ
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোটের প্রচারণায়ও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পোস্টার ও ড্রোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাসহ কী করা যাবে, কী করা যাবে না — তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে নতুন বিধিমালায়।
কোনো প্রার্থী বা তার নির্বাচনী এজেন্ট কিংবা তার পক্ষে অন্য কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন। তবে প্রচারণা শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট প্ল্যাটফর্মের নাম, অ্যাকাউন্ট আইডি, ই-মেইলসহ শনাক্তকরণ তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।
এক্ষেত্রে নির্বাচনী স্বার্থে এআই ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্যে কোনো কনটেন্ট তৈরি, ঘৃণাত্মক বক্তব্য, ভুল তথ্য, বিকৃত ছবি বা বানোয়াট তথ্য প্রচার করা যাবে না। নারী, সংখ্যালঘু বা প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা উসকানিমূলক ভাষা ব্যবহার করা যাবে না।
ধর্মীয় বা জাতিগত অনুভূতির অপব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী কনটেন্ট প্রকাশ বা শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করতে হবে।
ভোটারদের বিভ্রান্ত করা, প্রার্থীর চরিত্রহনন বা সুনাম নষ্টের উদ্দেশ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অন্য কোনো মাধ্যমে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর, অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ বা মানহানিকর কোনো কনটেন্ট তৈরি, প্রচার বা শেয়ার করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে।
গুজব ও এআই-এর অপব্যবহার রোধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নতুন এসব ধারা যুক্ত করে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
প্রচারণা ও পরিবেশসংক্রান্ত বিধিনিষেধ
কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশে জনসভা, পথসভা বা অন্য কোনো ধরনের প্রচারণা চালাতে পারবে না। ভোটের প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহারের সুযোগও থাকছে না। নির্বাচনের দিন ও প্রচারকালীন সময়ে কোনো ধরনের ড্রোন, কোয়াডকপ্টার বা এ জাতীয় যন্ত্র ব্যবহার করা যাবে না।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে পারবে, তবে তাতে প্রার্থীর নাম, ছবি, পদের নাম বা প্রতীক উল্লেখ করা যাবে না।
বিলবোর্ডের ক্ষেত্রে শুধু ডিজিটাল বিলবোর্ডে বিদ্যুৎ ও আলো ব্যবহার করা যাবে। অন্য কোনো ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না।
ব্যানার, ফেস্টুন বা লিফলেটে পলিথিন বা প্লাস্টিক (পিভিসি) ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পরিবেশবান্ধব উপকরণ ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (ভিআইপি) তালিকায় এবার অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যুক্ত করা হয়েছে। ফলে তারা কোনো প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না।
কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা ও স্বচ্ছতা
আচরণবিধির গুরুতর লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রাখা হয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিওর সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ ছিল না, এবার তা যুক্ত করা হয়েছে।
আরপিও'র ৯১ ধারায় উল্লেখ রয়েছে— নির্বাচনী অপরাধে দোষী প্রমাণিত হলে নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে। এই বিধানটি এবার আচরণবিধিতে স্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
গণমাধ্যমের মাধ্যমে সংলাপ আয়োজন এবং সব প্রার্থীর এক মঞ্চে ইশতেহার ঘোষণার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট আসনের সব প্রার্থীকে নিয়ে একদিনে তাদের ইশতেহার পাঠের সুযোগ করে দেবেন।
এছাড়া, প্রথমবারের মতো দেশে আইটি-সাপোর্টেড ডাকযোগে ভোট (পোস্টাল ভোটিং) পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। এর আওতায় দেশের ভেতরের তিন শ্রেণির ব্যক্তি এবং প্রবাসী বাংলাদেশিরা ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন।
