ইসির নির্দেশ উপেক্ষা, ৪৮ ঘণ্টা পরেও সরেনি অধিকাংশ প্রার্থীর ব্যানার–পোস্টার
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী সব ধরনের নির্বাচনী প্রচারের ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড অপসারণের কথা থাকলেও অধিকাংশ প্রার্থী তা মানেননি।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছু ব্যানার ও পোস্টার অপসারণ করা হলেও অধিকাংশই রয়ে গেছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। শুধু অপসারণ না করাই নয়, অনেক প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ভেঙে প্রচারণাও চালিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন বলছে, নির্দেশনা না মানলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটরা ব্যবস্থা নেবেন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশন (ইসি) শনিবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে—অর্থাৎ তফসিল ঘোষণার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে—ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড অপসারণের নির্দেশ দেয়। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগকে চিঠি দেন নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মোহাম্মদ মনির হোসেন।
চিঠিতে বলা হয়, নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, দেয়াললিখন, বিলবোর্ড, গেট, তোরণ বা ঘের, প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জাসহ সব ধরনের প্রচারসামগ্রী এবং নির্বাচনী ক্যাম্প তফসিল ঘোষণার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিজ খরচে ও দায়িত্বে অপসারণ করতে হবে। এ লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনার কথাও বলা হয়।
তখন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, নির্দেশনা অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে আগাম প্রচারসামগ্রী অপসারণ করতে হয়েছে। অন্যথায় নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঢাকার কিছু ব্যানার-পোস্টার অপসারণ হলেও অনেক জায়গায়ই ঝুলছে
রাজধানীর অন্তত আটটি আসন ঘুরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টিসহ কয়েকটি দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ড দেখা গেছে। সংখ্যার দিক থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারই বেশি ছিল। তবে কিছু এলাকায় অপসারণের চিত্রও দেখা গেছে।
বাংলামোটর থেকে শাহবাগের দিকে মেট্রোরেলের পিয়ারে ঢাকা-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মির্জা আব্বাসের ছবি ও দলীয় প্রতীক ধানের শীষ সংবলিত ছোট-বড় ব্যানার ও পোস্টার ঝুলতে দেখা গেছে। এ ছাড়া এনসিপির প্রার্থী কাজী ফখরুল ইসলাম, বাংলাদেশ রিপাবলিকন পার্টির ইঞ্জিনিয়ার কামাল হোসেন এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হকসহ কয়েকজন প্রার্থীর ব্যানার ও পোস্টারও দেখা গেছে।
ইস্কাটন এলাকায় বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাসের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিনের পোস্টারও চোখে পড়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণার পর শুক্রবার সকালে জামায়াতে ইসলামী ঘোষণা দিয়ে পোস্টার ও ব্যানার অপসারণ কার্যক্রমে নামলেও বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।
জামায়াত ঘোষণা দিয়ে কয়েকটি এলাকায় ব্যানার ও পোস্টার অপসারণ করলেও ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় দলটির সমর্থিত প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার দেখা গেছে। শুক্রবার জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়ে বলেছিলেন, "আরপিও অনুযায়ী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সবাই নিজ দায়িত্বে প্রচার উপকরণ সরিয়ে নিন।"
এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "অল্প সময়ের মধ্যে সবাই আরপিওর বিষয়টি না জানার কারণে হয়তো সব জায়গার পোস্টার ও ব্যানার অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। নীতিমালা সম্পর্কেও সবাই পরিষ্কারভাবে জানেন না। তবে দল থেকে দ্রুত ব্যানার-পোস্টার সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। আমাদের অনেক প্রার্থী নিজের হাতেও পোস্টার অপসারণ করেছেন।"
ঢাকার বাইরেও প্রায় একই চিত্র
রাজশাহীতে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার, ব্যানার, বিলবোর্ড, দেওয়াললিখন ও তোরণ অপসারণের কাজ শুরু হলেও কোথাও কোথাও সেগুলো রয়ে গেছে। রাজশাহীর সংসদীয় আসনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রার্থী নিজ খরচে পোস্টার অপসারণ করছেন।
রাজশাহী-২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু জানান, পোস্টার ও ব্যানার নিজ খরচে অপসারণের জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং তারা সেগুলো সরাচ্ছেন।
বরিশালের অধিকাংশ স্থান থেকে এখনো প্রার্থীদের ব্যানার ও পোস্টার অপসারণ করা হয়নি। যদিও প্রার্থীরা বলছেন, অপসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বরিশাল নগরীর জিলা স্কুল মোড়, নথুল্লাবাদ, রূপাতলী বাস টার্মিনাল, সদর রোড ও লঞ্চঘাট এলাকায় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনের প্রতীকে ভোট চেয়ে পোস্টার লাগানো দেখা গেছে। সরাসরি প্রার্থীদের পোস্টার না থাকলেও প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানিয়ে লাগানো ব্যানার ও পোস্টার এখনো রয়েছে।
বরিশাল জেলার বিভিন্ন উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু কিছু স্থানের ব্যানার সরানো হলেও অনেক জায়গায় এখনো রয়ে গেছে।
লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনের মধ্যে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী মাস্টার রুহুল আমিন ভূঁইয়া, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ড. রেজাউল করিম, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী এ আর হাফিজ উল্লাহ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ানের কর্মী-সমর্থকেরা নিজ নিজ পোস্টার ও বিলবোর্ড অপসারণ শুরু করেছেন।
তবে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্য দলের প্রার্থীদের পোস্টার অপসারণ করতে দেখা যায়নি। জেলা বিএনপির একজন নেতা জানান, তাদের প্রার্থীরাও রোববারের মধ্যে পোস্টার ও বিলবোর্ড অপসারণ করবেন।
কুষ্টিয়া ও ফরিদপুরসহ আরও কয়েকটি জেলাতেও প্রায় একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে।
নিয়ম ভেঙে দ্বিতীয় দিনেও প্রচারণা, গুনতে হলো জরিমানা
তফসিল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়সীমার বাইরে নির্বাচনী প্রচারণা না করার নির্দেশনা থাকলেও শুক্রবারের পর শনিবারও কিছু এলাকায় প্রার্থীদের প্রচারণায় অংশ নিতে দেখা গেছে। নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া–লোহাগাড়া) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী নাজমুল মোস্তফা আমিনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নাজমুল মোস্তফা আমিন শনিবার বিশাল মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করেন। পরে সাতকানিয়ার বটতলী এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত শুনানি শেষে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা, ২০২৫-এর ৯ ধারা লঙ্ঘনের দায়ে ২৭ ধারার বিধান অনুযায়ী এ অর্থদণ্ড দেওয়া হয়।
