প্রস্তাবিত বিটিআরসি নীতিমালায় ইন্টারনেটের দাম ১৮.৪% বৃদ্ধির সম্ভাবনা: আইএসপিএবি
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) কর্তৃক প্রস্তুতকৃত খসড়া টেলিযোগাযোগ নীতিমালার অধীনে বাংলাদেশে ইন্টারনেটের দাম ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দেশীয় উদ্যোক্তা এবং ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) সতর্ক করেছে, এই পদক্ষেপ দেশের ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীদের (আইএসপি) মারাত্মকভাবে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।
আজ সোমবার (৩ নভেম্বর) ঢাকায় রাওয়া ক্লাবে আইএসপিএবি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এফটিএসপি) জন্য খসড়া নীতিমালার তীব্র বিরোধিতা করেছে আইএসপিএবি।
বিটিআরসি'র প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুসারে, এফটিএসপি অপারেটরদের ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের জন্য ১ শতাংশ দিতে হবে। এছাড়া তাদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বাড়বে।
ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন কারণ এই নতুন আর্থিক বোঝা, টেলিকম অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস (এফডব্লিউ) এবং হটস্পট সুবিধা সম্প্রসারণের সাথে মিলিত হয়ে প্রায় ২,৭০০ ছোট, দেশীয় আইএসপি-র অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
আইএসপিএবি সভাপতি আমিনুল হাকিম এই নীতি পরিবর্তনের সমালোচনা করে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের টেলিকম নীতিগুলো তাদের মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং এখন আর জনস্বার্থের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।
আমিনুল হাকিম বিদ্যমান নীতির সঙ্গে প্রস্তাবিত নীতির তুলনামূলক উপস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, 'সরকার ভুল পথে যাচ্ছে।'
'ডিজিটাল বৈষম্য বাড়াবে'
তার মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বর্তমানে এই খাত থেকে ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ রাজস্ব সংগ্রহ করে; যার মধ্যে সাবমেরিন কেবল, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে, আন্তর্জাতিক টেরেস্ট্রিয়াল কেবল থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব এবং রাজস্ব ভাগাভাগি, সামাজিক দায়বদ্ধতা অবদান ও ভ্যাটের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ অন্তর্ভুক্ত।
তবে, নতুন প্রস্তাবিত নীতিমালার অধীনে সরকারের মোট অংশ বেড়ে ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে।
আইএসপিএবি সভাপতি বলেন, 'প্রস্তাবিত নীতিমালা শহর ও গ্রামীণ এলাকার মধ্যে ডিজিটাল বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। একদিকে তারা ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলে, অন্যদিকে তাদের নীতিগত সিদ্ধান্ত এটিকে আরও ব্যয়বহুল করে তুলছে।'
হাকিম লাইসেন্সিং ফির ক্ষেত্রেও অসামঞ্জস্যতার কথা তুলে ধরেন। তিনি প্রশ্ন করেন, 'স্টারলিংকের জন্য সরকার মাত্র ১০ হাজার ডলার [প্রায় ১২ লক্ষ টাকা] লাইসেন্স ফি নির্ধারণ করেছে, যেখানে স্থানীয় আইএসপিদের ২৫ লক্ষ টাকা দিতে হয়। একটি বৈশ্বিক কোম্পানিকে কেন এমন অগ্রাধিকারমূলক আচরণ করা হচ্ছে?'
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি বলেছে, প্রস্তাবিত খসড়া গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস অ্যাকসেস এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে। এছাড়া, সাধারণ গ্রাহকের ওপরও বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
