নভেম্বরে গণভোট চায় জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আটদল; বৈঠক শেষে সিইসিকে স্মারকলিপি প্রদান
জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন ও আগামী নভেম্বরে গণভোট চেয়ে ৫ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের প্রতিনিধিরা। আজ বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুর ১টায় এ বৈঠক শুরু হয়।
বৈঠক শেষে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেছেন, 'নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট একদিনে নয়।'
জুলাই জাতীয় সনদের আইনিভিত্তি দেওয়ার লক্ষ্যে নভেম্বরে গণভোট আয়োজনের দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে (সিইসি) স্মারকলিপি দিয়েছে আটটি দল। আটটি দল হলো— বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।
৫ দফা দাবির মধ্যে আছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যে গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; 'ফ্যাসিস্ট' সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; 'স্বৈরাচারের দোসর' জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এই জামায়াত নেতা বলেন, 'আজ সিইসির সাথে দেখা হয়েছে। বর্তমান আলোচিত বিষয় হচ্ছে জুলাই জাতীয় সনদ। সনদে ২৫টি রাজনৈতিক দল এসে স্বাক্ষর করেছি। ইসিকে আমরা বলেছি, গণভোট নভেম্বর মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। সংশোধিত আরপিও নিয়ে কোনো কোনো দল সংশোধনী আনতে বলেছে। আমরা বলেছি আরপিও হুবহু বহাল রাখতে হবে।'
৮ দলের দাবির বিষয়টি কমিশন নোট নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আব্দুল হালিম বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। আট দলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে স্মারকলিপি দেওয়ার পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী তিন তারিখ নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। সিইসি আমাদের কথা শুনেছেন। দাবি বিবেচনার ক্ষেত্রে উনাদের ভূমিকার কথা বলেছেন।'
যারা জুলাই চেতনার পরিপন্থী কাজে থাকবে, তারা জনগণের কাছে নিগৃহীত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'জুলাইয়ের প্রেক্ষাপটেই এত আয়োজন। তাই গণভোট আগে না করলে জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।'
গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ৫ দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে।
সবশেষ ১৯ অক্টোবর জুলাই সনদ বাস্তবায়নে 'আদেশ' জারি এবং নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজনসহ ৫ দফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের চতুর্থ পর্বে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা আটটি রাজনৈতিক দল।
এ ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে স্মারকলিপি দেবে দলের নেতারা। দুপুর সাড়ে ১২ টায় দলগুলোর নেতারা স্মারকলিপি নিয়ে নির্বাচন ভবনে প্রবেশ করেছে। বাইরে কর্মীরা নভেম্বরে গণভোটের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সামনে ও মেট্রোরেল স্টেশনের কাছে পাকামার্কেট সংলগ্ন সড়কের পাশে অস্থায়ী মঞ্চ করে সমাবেশ করেছে।
এ সময় জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, মোবারক হোসেন, রেজাউল করিম, নাজিম উদ্দিন মোল্লাসহ নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এ সমাবেশে নাজিম উদ্দিন মোল্লা বলেন, "নভেম্বরের মধ্যে গণভোট আয়োজন করতে হবে। আমরা আট দল মিলে ইসির কাছে স্মারকলিপি দেবো।"
একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচনে বিএনপির দাবির কঠোর সমালোচনা করেন জামায়াত নেতারা।
নির্বাচন ভবনের সামনে ইসলামী আন্দোলনের নেতারা সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বলেন, "সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোট করতে হবে। এ নিয়ে কোনো টালবাহানা চলবে না। গণভোটসহ আমাদের দাবি না মানলে ইসির পরিণতি আগের মতোই হবে।"
