তোমরা কি আমাকে মেরে ফেলবে?: কাঠগড়ায় পুলিশের উদ্দেশে সেলিম প্রধান

ঢাকার গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা এক মামলার শুনানিকালে কাঠগড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান। এসময় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'তোমরা কী আমাকে মেরে ফেলবে? তোমরা যদি ৫০ শতাংশ সৎ থাকতে তাহলে দেশের আজকে এ অবস্থা হতো না।'
বুধবার (২২ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় আওয়ামী লীগের সক্রিয় নেতা ও অর্থ যোগানদাতা সন্দেহে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করে পুলিশ। পুলিশের আবেদনের পর ঢাকার ভারপ্রাপ্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান আবেদনটি মঞ্জুর করেন।
বেলা ১২টা ৫৫ মিনিটে সিএমএম আদালতের হাজতখানা থেকে পুলিশের কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট পরিয়ে সেলিম প্রধানকে আদালতের এজলাসে আনা হয়। এরপর কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর পর কিছুক্ষণ পরই তাকে অসুস্থ হয়ে পড়তে দেখা যায়।
পরে বিচারক এজলাসে আসেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা, গুলশান জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক মো. মোজাম্মেল হক মামুন আসামিকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
এরপর সেলিম প্রধানের আইনজীবী সাহিদুল ইসলাম সিহাব জামিন আবেদন করে শুনানিতে বলেন, 'আসামির এজাহারে তার কোনো নাম নেই। তাকে সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। বিগত সরকার আমলে তার বিরুদ্ধে ৮-৯টি মামলা দেওয়া হয়েছে। জুলাই আন্দোলনের সময় আসামির কনট্রিবিউশন ছিল। আসামির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসামি নির্দোষ, তার জামিন চাচ্ছি।'
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মুহাম্মদ শামসুদ্দোহা সুমন গ্রেপ্তার দেখানোর পক্ষে শুনানিতে বলেন, 'গ্রেপ্তার দেখানোর আগে জামিনের আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। আসামি একজন ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। ফ্যাসিস্ট সরকারকে ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। আসামি শামীম ওসমানের লোক। আওয়ামী লীগের মিছিলে লোকজনকে ভাড়া করে আনার জন্য জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন তিনি।'
এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা সেলিম প্রধান প্রতিবাদ করে বলেন, 'এই ধরনের মিথ্যা কথা বলবেন না। ছি ছি। এত মিথ্যা! এত মিথ্যা কথা!' পরে তার আইনজীবী তাকে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে বলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শেষ হলে বিচারকের অনুমতি নিয়ে সেলিম প্রধান নিজের বক্তব্য রাখতে চান। বিচারক দুই মিনিট সময় দিলে তিনি বলেন, 'মিথ্যা কথা বলবেন না। পৃথিবীর কোনো শক্তি নেই যে আমি কোনো দলের সদস্য ছিলাম, এটা বলতে পারে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে কেউও বলতে পারবে না, আমি কোনো অপরাধ করেছি। আমি একজন ব্যবসায়ী মানুষ। গত বছরে আমি মোহাম্মদ আজিজ, জোসেফ, হারিসের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করি। সাবেক এমপি শামীম ওসমানকে গালাগালি করেছি। জুলাই মাসে বাংলাদেশের যুদ্ধ প্রথম চালু করেছি আমি। প্রতিদিন রাস্তায় ছিলাম। আপনারা ভিডিওগুলো ঘেঁটে দেখুন। আমি চেয়েছি বাংলাদেশের ভালো হোক। দেশের পুলিশ ও মানুষজন সৎ না হলে কোনো কিছুই হবে না। ওরা নিজ জায়গায় দাঁড়িয়ে মিথ্যা কথা বলে।'
শুনানি শেষে বিচারক সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর সেলিম প্রধান কাঠগড়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন পুলিশ সদস্যরা তাকে হাজতখানায় নিতে চাইলে তিনি চিৎকার করে বলেন, 'তোমরা কি আমাকে মেরে ফেলবে? তোমরা (পুলিশ) যদি ৫০ শতাংশ সৎ থাকতে তাহলে দেশের আজকে এ অবস্থা হতো না। আমি অসুস্থ, উচ্চ রক্তচাপ আছে আমার।'
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটার দিকে রাজধানীর গুলশানের বারিধারার নেক্সাস ক্যাফে প্লেস নামের একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। সেখান থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি সীসা উদ্ধারের দাবিও জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরবর্তীতে গুলশান থানার উপপরিদর্শক মাহমুদুল হাসান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। সেই মামলায় সেলিম প্রধান বর্তমানে কারাগারে আটক আছেন।