সালমান শাহ’র অপমৃত্যু মামলাকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ আদালতের

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ইমন ওরফে সালমান শাহের মৃত্যুর ঘটনায় তার মা নীলা চৌধুরীর করা রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে এজাহার আকারে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে শুনানি শেষে ঢাকার ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হকের আদালত এই আদেশ দেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'রিভিশন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একই সঙ্গে রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। আসামি রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছে, সেটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করারও নির্দেশ দিয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'বিগত দিনে থানার পুলিশ, তদন্ত কর্মকর্তা, পিবিআই এবং একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট এই মামলায় গাফিলতি করেছেন। এটিকে হত্যা মামলা হিসেবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন ছিল, তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আদালত নতুনভাবে মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।'
বাদী পক্ষের আইনজীবী আবীদ হাসান বলেন, 'সালমান শাহর মৃত্যুর পর তার বাবা কমর উদ্দিন রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর তিনি মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তরের আবেদন করলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ ঘটনায় রিজভী ওরফে ফরহাদ নামে এক আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে, যেখানে সালমানকে কীভাবে হত্যা করা হয় তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। তারপরও মামলাটি আলোর মুখ দেখেনি। সবশেষে পিবিআই মামলাটি তদন্ত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, যা আদালত গ্রহণ করে আসামিদের অব্যাহতি দেন। আজ আদালত সেই আদেশ রদ করেছেন এবং কমর উদ্দিনের অভিযোগ ও রিজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদের জবানবন্দি সংযুক্ত করে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি রমনা মডেল থানা পুলিশকে নতুন করে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'
এদিন বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন এবং রায়ের সারসংক্ষেপ পড়ে শোনান। প্রায় এক ঘণ্টাব্যাপী রায়ের বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন তিনি।
রিভিশন শুনানিকালে আদালতে সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুমসহ অনেক ভক্ত উপস্থিত ছিলেন। তারা সালমান শাহর মৃত্যুর বিচার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। রায়ের পর সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইস্কাটনের বাসা থেকে চিত্রনায়ক সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তখন তার বাবা কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী রমনা মডেল থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। পরের বছর, ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই, তিনি মামলাটিকে হত্যা মামলা হিসেবে রূপান্তরের আবেদন করেন, যা আদালত গ্রহণ করেনি। আদালতের নির্দেশে তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি।
১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর সিআইডি তদন্ত শেষে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়, যেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। ওই বছরের ২৫ নভেম্বর ঢাকার সিএমএম আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তি করে। তবে কমর উদ্দিন আহমদ চৌধুরী প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করে রিভিশন মামলা করেন।
২০০৩ সালের ১৯ মে আদালত মামলাটি বিচার বিভাগীয় তদন্তে পাঠান। ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন, যেখানে সালমান শাহর মৃত্যুকে আবারও অপমৃত্যু বলা হয়।
কমর উদ্দিন আহমদের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী নীলা চৌধুরী মামলার বাদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৫ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তিনি বিচার বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজির আবেদন করেন।
পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই, যারা ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত প্রতিবেদনটি গ্রহণ করে মামলাটি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। এরপর ২০২২ সালের ১২ জুন এই আদেশের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়াপাড়ায় নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন সালমান শাহ। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যু হয়।