ভোটের দিন কেউ গন্ডগোল করলে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেবেন: নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি সিইসি

বাংলাদেশের নির্বাচনে নিরাপত্তা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিরাপত্তা। প্রশাসনিক, আইনগত ও প্রযুক্তিগত নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনাই সবচেয়ে কঠিন বিষয়।'
এজন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় জোরদার করার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
আজ শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে আয়োজিত কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিইসি এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন। উক্ত কর্মশালার আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন।
নাসির উদ্দিন বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য একটি স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করা। এজন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি কড়া নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, 'ভোটের দিন যদি কেউ গন্ডগোল করে, তাহলে ভোটকেন্দ্র বন্ধ করে দেবেন। প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোটও স্থগিত করা হবে। আইন আপনাদের পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে— আপনারাই কেন্দ্রের প্রধান। আমরা ছাড়ার পাত্র নই।'
তিনি আরও বলেন, 'একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হলে প্রশাসনিক দক্ষতা ও নৈতিক দৃঢ়তা দুটোই দরকার। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাই সেই কাঠামোর মূল ভিত্তি। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনারা আইনের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করবেন, নির্বাচন কমিশন আপনাদের পূর্ণ সমর্থন ও সুরক্ষা দেবে।'
সিইসি বলেন, 'আমরা চাই এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে দেশবাসীকে দেখাতে, আইনের শাসন কাকে বলে। তাতে যা হয় হোক, আমরা নীতিগত অবস্থান থেকে নড়ব না। আমরা একটি এমপাওয়ার্ড প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, রিটার্নিং অফিসার তৈরি করতে চাই। নির্বাচনের দিন আপনারাই হবেন কেন্দ্রের চিফ ইলেকশন কমিশনার।'
তিনি আরও বলেন, 'আইন আপনাদের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতার সঠিক ব্যবহারই হবে আপনাদের প্রকৃত দায়িত্ব।'
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'আপনাদের হাতে আমরা সমস্ত ক্ষমতা দিচ্ছি। আপনি যদি সেই ক্ষমতা ব্যবহার না করেন, তাহলে সেটা হবে আপনার অপরাধ। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে সেটাও আমরা ভালোভাবে নেব না।'
ভুল তথ্য ও গুজব প্রতিরোধে একটি বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, 'এই সেলের কাজ সম্পর্কে জনগণ জানে না। আমাদের এই প্রচারটা জোরদার করতে হবে, যাতে মানুষ জানতে পারে কোথা থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।'
তিনি আরও বলেন,'বিদেশে অবস্থানরত ভোটারদের ব্যালট ব্যবস্থাপনা ও গণনা পদ্ধতি আরও উন্নত করা হবে। এজন্য ডাক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে। আমরা চাই, জনগণ এমন একটি নির্বাচন দেখুক যেখানে শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা থাকবে— আর সবাই বিশ্বাস করবে, আইন সবার জন্য সমান।'
কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ, চট্টগ্রাম বিভাগের কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আহসান হাবিব পলাশ, ইউএনডিপির সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি আনোয়ারুল হক এবং সিবিটিইপি প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তফা হাসান। সভায় সভাপতিত্ব করেন সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ বশির আহমেদ।