বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি না মানলে লাগাতার শাটডাউনের হুঁশিয়ারি

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে কমিশনের সভায় অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি নিয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটি হুঁশিয়ারি দিয়েছে- ২০২৫ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস পে কমিশনের প্রতিবেদনে যদি আবারও কর্মচারীরা বঞ্চিত হন, তাহলে লাগাতার শাটডাউনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
রোববার (৫ অক্টোবর) সংগঠনটির সভাপতি রেজোয়ান খন্দকার ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. সালাউদ্দিনের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। এতে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের আলোকে বেতন-ভাতা প্রদান এবং বিদ্যমান জুডিশিয়াল সার্ভিস বেতন স্কেলের ১ম থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেডের পরবর্তী ধাপে ৭ম থেকে ১২তম গ্রেডভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পে কমিশনের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় কমিশনের কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ এবং বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের সদস্যদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ বিষয়ে প্রাথমিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হলেও অধস্তন আদালতে কর্মরত সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের ন্যায্য দাবি স্থান পায়নি।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়েছে, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিশন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি এবং অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া আগামী ৯ অক্টোবর কমিশন সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের- বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, আইন মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন ও বিচার প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বিচারকদের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা নির্ধারণ বিষয়ে মতবিনিময় করবে।
সংগঠনটি দাবি করে, 'কমিশনের আলোচনায় বিচার বিভাগে কর্মরত একমাত্র বিচারকের বেতন-ভাতা নিয়ে আলোচনা হলেও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তের উল্লেখ নেই। অথচ দেশের বিচার বিভাগের কার্যক্রম সচল রাখতে প্রায় ২০ হাজার সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, '২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর বিচারকদের জন্য ছয়টি গ্রেড রেখে পৃথক পে স্কেল ও নিয়োগবিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো সেই কাঠামোর বাইরে রয়েছেন। যদি বিচারক আদালতের হৃদপিণ্ড হন, তবে সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেই আদালতের স্নায়ুতন্ত্র। মামলার নথি প্রস্তুত থেকে রায় প্রচার পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে তাদের অবদান অপরিহার্য। তাদের অক্লান্ত শ্রম ছাড়া বিচার বিভাগ কার্যত অচল।'
সংগঠনটির সভাপতি মো. রেজোয়ান খন্দকার বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠায় যে রোডম্যাপ ঘোষণা করেছেন, তাতে অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবি বাস্তবায়নের কোনো প্রতিফলন নেই। বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষার প্রথম শর্তই হলো বৈষম্যহীন কাঠামো নিশ্চিত করা।'
সাধারণ সম্পাদক কাজী মো. সালাউদ্দিন বলেন, 'আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বভার গ্রহণের পর সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত থাকলেও অধস্তন আদালতের সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায্য দাবির বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। আগামী ৯ অক্টোবরের সভায় যদি সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হয় এবং ২০২৫ সালের জুডিশিয়াল সার্ভিস পে কমিশনের প্রতিবেদনে যদি আবারও কর্মচারীরা বঞ্চিত হন, তাহলে লাগাতার শাটডাউনসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার জন্য অ্যাসোসিয়েশন প্রস্তুত থাকবে।'