তেল নিতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জিপ চালক তইচিং মারমা, ঘরে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

গাড়ির জন্য তেল আনতে গত রোববার সকাল সাড়ে ১১টায় পাশের রামসু বাজারে গিয়েছিলেন খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার বটতলা এলাকার জীপ চালক তইচিং মারমা (২০)। তখন সড়ক অবরোধ করা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে গুলিবিদ্ধ হন তইচিং। তবে তার কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।
ঘরে ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী তানু মারমা, মা দানুচিং মারমা অপেক্ষায় ছিলেন। আর তার বাবা হলাচাই মারমা তখন পাগলের মত ছুটছিলেন সন্তানের খোঁজে। পরে, রাত ৮ টার দিকে ছেলের মৃত্যু সংবাদ পান হলাচাই।
হলাচাই মারমা টিবিএসকে বলেন, 'সকাল ১১টার দিকে তইচিং আমার সাথে বসে ভাত খেয়েছে। এর মাঝে তার জিপের ড্রাইভার ফোন করে গাড়ির জন্য তেল নিতে বলে। সাড়ে ১১টার দিকে ঘর থেকে বের হয়ে রামসু বাজারে যায় সে। তার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না।'
তিনি বলেন, 'তার মেবাইলে বারবার কল দিয়ে কোন সাড়া পাচ্ছিলাম না। এর মাঝে খবর পেলাম রামসু বাজারে হওয়া সংঘর্ষের সময় সে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তবে, গুইমারা ও খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে তার কোন খোঁজ পাইনি। পরে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে তার মোবাইলে কল দিলে এক পুলিশ অফিসার ধরে। তখনও সে জানায়নি আমার ছেলে মারা গেছে। আমার ছেলে বেঁচে আছে এই আশায় খাগড়াছড়ি হাসপাতালে গিয়ে রাত ৮টার দিকে মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার ছেলে জীবনে কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক মিটিং বা মিছিলে যায় নাই। অল্প বয়স থেকে জিপ চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল। মাত্র বছর খানেক আগে তাকে বিয়ে করাই। তার স্ত্রী তানু মারমা এখন নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অল্প বয়সে মেয়েটা বিধবা হয়ে গেল কোনো কারণ ছাড়া।"
কোন মামলা করে বিচারের প্রত্যাশা নেই জানিয়ে হলাচাই বলেন, আমার ছেলে তো চলে গেছে। তাকে ফিরে পাওয়া সম্ভব না। আমরা চাই সরকার যেন আমার ছেলের বিধবা স্ত্রীর পাশে দাড়ায়। সে শিক্ষিত, তার যোগ্যতা অনুসারে তাকে যেন একটি চাকরি দিয়ে সন্তান নিয়ে ভবিষ্যৎ জীবন নিশ্চিত করে এই দাবি জানাই।
তার বড় ভাই উখ্যচিং মারমা টিবিএসকে বলেন, প্রশাসন আমাদের তইচিংয়ের মরদেহ দেয়নি। সোমবার রাতে লাশ এনে নিজেরা উপস্থিত থেকে দাহ করেছে। আমরা শুধু তার মুখটা দেখতে পেয়েছি শুধু। তার মুখটা থেতলানো ছিল। আমরা শুনেছি, তার পায়ে গুলি লেগেছে ও পরে তাকে নিয়ে পেটানো হয়।
খাগড়াছড়িতে এক মারমা কিশোরীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে শনিবার সকাল থেকে অবরোধের ডাক দিয়ে জুম্ম ছাত্র-জনতা নামের একটি সংগঠন। অবরোধ চলাকালে জেলার গুইমারা উপজেলার রামসু বাজারে পাহাড়ি, স্থানীয় বাঙালি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে তিন মারমা অধিবাসী নিহত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সহ অন্তত ১৬ জন আহত হন। নিহতদের ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতে দাহ করা হয়।