প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সমাজে বিভেদ ছড়ানোর চেষ্টা: আসক

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সাংস্কৃতিক অধিকারের পরিপন্থী বলে মনে করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
মানবাধিকার সংগঠনটি বলছে, এই দাবি ও অবস্থান শুধু বিভ্রান্তিকরই নয়, বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমাজে বিভেদ ও বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে আসক জানিয়েছে, 'বাংলাদেশের সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চা ও শিল্প-সাহিত্যে অংশগ্রহণের অধিকার দিয়েছে।'
বলা হয়, 'বাংলাদেশ একটি রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দেশ, যেখানে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, সামাজিক আন্দোলন এবং সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামে সঙ্গীত ও শিল্প-সংস্কৃতি ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই সঙ্গীত শিক্ষা শুধু বিনোদনের বিষয় নয়; এটি মানসিক বিকাশ, নৈতিক শিক্ষা, সৃজনশীলতা ও সহনশীলতা বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম।'
আরও বলা হয়েছে, 'এই ঐতিহ্যকে রক্ষা ও বিকশিত করা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং সামাজিক সম্প্রীতির অপরিহার্য শর্ত। এই প্রেক্ষাপটে সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবি শুধু সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী নয়, বরং আমাদের জাতীয় সংস্কৃতিকে দুর্বল করার অপচেষ্টা।'
আসক বলেছে, 'শিশুদের সার্বিক মানসিক বিকাশের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক শিক্ষা ও চর্চার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কিছু গোষ্ঠী সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের দাবিকে সামনে রেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শিল্প সংস্কৃতিকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।'
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, 'এ ধরনের প্রচেষ্টা কেবল অযৌক্তিকই নয়, বরং সমাজকে একপেশে করে তোলার ঝুঁকি তৈরি করছে, যার সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক ফলাফল আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সংস্কৃতির ভিত্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।'
আরও বলা হয়, 'আসক দৃঢ়ভাবে মনে করে, বিদ্যালয়ে ধর্মীয় শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা থাকতে পারে, সেটি আলাদা নীতিগত আলোচনা বিষয়ও হতে পারে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি উত্থাপন করা যেতে পারে। তবে কোনো অবস্থাতেই সেই দাবিকে অজুহাত করে শিল্প-সংস্কৃতির চর্চা বাধাগ্রস্ত করা বা সঙ্গীত শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগের মতো দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'এই ধরনের প্রচেষ্টা কেবল সাংস্কৃতিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে না, বরং সামাজিক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদী চেতনার ওপর আঘাত হানে।'