আশুলিয়ায় ৬ জনকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু সোমবার

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনকে ঘিরে আশুলিয়ায় ছয়জনের লাশ পোড়ানোসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামসহ ১৬ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) ট্রাইব্যুনাল–২ এ আদেশ দেন।
এদিন মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ার সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দেন।
সূচনা বক্তব্যে তিনি বলেন, 'পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে, অনেক স্বৈরাচার পালিয়ে গেছে। বাংলাদেশে দেখা গেছে, স্বৈরাচার পালিয়েই শুধু যায়নি, তার ৩০০ এমপি, তার মন্ত্রিসভা, পুলিশ বাহিনী, দলীয় নেতা-কর্মী, এমনকি মসজিদের ইমাম ও নিজেদের শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ বলে দাবি করা উচ্চ আদালতের বিচারকেরাও পালিয়েছেন।'
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, 'মাননীয় ট্রাইব্যুনাল, আমি আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি, এই মামলায় নির্মোহ, নিরপেক্ষ, নির্ভুল ও দৃঢ় বিচার নিশ্চিত করুন। দোষীদের যথাযথ শাস্তি দিন, যাতে জনগণের বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা ফিরে আসে। কারণ, আমরা এমন একটি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ন্যায়বিচার কেবল একটি রায় নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। অপরাধী যত বড়ই হোক, কৃতকর্মের বিচার থেকে কেউ রেহাই পাবে না।'
এর আগে, গত ২১ আগস্ট এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন বিচারকার্যের শুরুতেই আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। পরে উপস্থিত আট আসামিকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পড়ে শোনানো হয়।
সে সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজন নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে সাবেক এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করেন এবং রাজসাক্ষী হতে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, মামলার বিষয়ে যা জানেন সব আদালতে বলতে চান। পরে তার দোষ স্বীকারোক্তি রেকর্ড করে ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাকে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলা হয়। লিখিত আবেদনের পর তিনি স্টেট অ্যাপ্রুভার (রাজসাক্ষী) হিসেবে গৃহীত হন।
পরে সাংবাদিকদের চিফ প্রসিকিউটর জানান, আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর তাদের লাশ পুলিশের ভ্যানে তুলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এক ব্যক্তি জীবিত ছিলেন। এমন বর্বরতা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেই ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলছে, যার মধ্যে আটজন পলাতক। সূচনা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রোববার আনুষ্ঠানিক পর্ব শুরু হয়েছে, আর সোমবার থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
গ্রেপ্তার আট আসামি হলেন- সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল মালেক, আরাফাত উদ্দীন, কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক এবং সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। এ ছাড়া সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামসহ মামলার আট আসামি এখনও পলাতক।