রামপুরা–বনশ্রীতে ‘অতিউৎসাহে হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব’ দেন সাবেক দুই বিজিবি কর্মকর্তা: চিফ প্রসিকিউটর
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, চব্বিশের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় তখনকার বিজিবি কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদওয়ানুল ইসলাম ও মেজর রাফাত বিন আলম 'অতিউৎসাহী হয়ে' কমান্ডিং পজিশনে থেকে দুই দিনে ২৮ জনকে গুলি করে হত্যা করেছেন।
আজ বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে আইসিটি-১ চার আসামির বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচার শুরুর আদেশ দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন বিজিবির সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদওয়ানুল ইসলাম ও মেজর মো. রিফাত বিন আলম।
তাজুল ইসলাম বলেন, ২০২৪ সালের ১৮ ও ১৯ জুলাই রামপুরায় ছাত্র-জনতার ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এ মামলায় রেদওয়ানুল-রাফাত ছাড়াও পুলিশের দুই কর্মকর্তা ছিলেন। রামপুরার এই নিষ্ঠুরতা সাংবাদিকদের কল্যাণে গোটা জাতি ও দুনিয়া দেখেছে। অটোমেটিক রাইফেল ও সাব-মেশিনগান দিয়ে নিরস্ত্র-নিরীহ ছাত্র-জনতার ওপরে টার্গেট করে করে এই দুইদিনে ২৮ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। রাষ্ট্রের সর্বশক্তি নিয়োগ করে বাংলাদেশে যারা গণহত্যা চালিয়েছিল, প্রত্যেকেই অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রের আঘাতে নিহত হয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ছাত্র-জনতার হাতে কোনো ধরনের অস্ত্র ছিল না। তারা কোনোরকম হুমকি তৈরি করেননি। কিন্তু আসামিরা বাহিনীর, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা করার জন্য। কিন্তু সে শক্তি জাতির সবচেয়ে মেধাবী সন্তানদের ওপর প্রয়োগ করেছিলেন তারা। এই দায় আসামিদের ব্যক্তিগত দায়। বাহিনী হিসেবে বিজিবিকে আমরা আসামির শ্রেণিভুক্ত করিনি।
আসামিপক্ষের আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ বলেন, "রেদওয়ানুল ও রাফাত দুজনই আর্মড ফোর্সেস'র সদস্য। তারা পুরোপুরি নির্দোষ। তাদের গুলিতে আসলে কোনো মানুষ মারা যাননি। যে ২৮ জনের কথা বলা হচ্ছে, এটা অতিরিক্ত মাত্রায় সোশ্যাল মিডিয়া হাইপড। ২৮ জন মানুষের প্রাণ গিয়েছে, এটা হতে পারে। কিন্তু, এখানে আমার ক্লায়েন্টের সঙ্গে আরও অন্যান্য বাহিনী বা পুলিশের লোক ছিলেন। সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী অন্যান্য সদস্যরা ছিলেন। অন্যান্যরা এ ঘটনার পর পালিয়ে গিয়েছেন। এই দু'জন চাইলেই পালিয়ে যেতে পারতেন। তাদের মাধ্যমে যেহেতু কোনো সংঘাত হয়নি, তাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বিচারের মুখোমুখি হয়েছেন।"
এ মামলায় পলাতক আসামিরা হলেন– ডিএমপির খিলগাঁও অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদুল ইসলাম ও রামপুরা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মশিউর রহমান।
বুধবারে বিচারিক কার্যক্রম শুরুতেই আসামিদের চাওয়া অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
অভিযোগ পড়া শেষে দুই আসামিকে দোষ স্বীকার করেছেন কি না—এমন প্রশ্ন করা হলে কাঠগড়ায় থাকা দুই সাবেক বিজিবি কর্মকর্তা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন এবং আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন।
এসময় দাঁড়িয়ে রেদওয়ানুল বলেন, "আমি নির্দোষ। মহামান্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করি।" একই সুরে কথা বলেন অপর আসামি রাফাত বিন আলমও। পরে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের বসার অনুমতি দেন ট্রাইব্যুনাল।
এ সময় সূচনা বক্তব্যসহ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণের আবেদন জানান প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আল নোমান। শুরুতে ১৯ জানুয়ারি ঠিক করলেও আসামিপক্ষে আরও সময় বাড়ানোর প্রার্থনা করেন আইনজীবী হামিদুল মিসবাহ। পরে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২০ জানুয়ারি ধার্য করেন আদালত।
