ভিপি হিসেবে পরিচয় দিতে চান না সাদিক; শিক্ষার্থীদের আমানত রক্ষা করাই এখন বড় দায়িত্ব, বললেন ফরহাদ

কোনো বিজয় মিছিল বা উল্লাস নয়, বরং শিক্ষার্থীদের দেওয়া 'আমানত' রক্ষার এক কঠিন পরীক্ষার পালা শুরু হলো—এমনটাই মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নবনির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) সাদিক কায়েম এবং সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদ। তারা উভয়েই এই বিজয়কে ব্যক্তিগত বা কোনো সংগঠনের অর্জন হিসেবে না দেখে, একে 'জুলাই প্রজন্ম' এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাধারণ শিক্ষার্থীর বিজয় বলে অভিহিত করেছেন।
বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত এই দুই ছাত্রনেতা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা ও শিক্ষার্থীদের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সাদিক কায়েম জুলাই বিপ্লব, মহান মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে নিহত সকল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, 'ডাকসু নির্বাচনে জয় অথবা পরাজয়ের কিছু নাই। ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রজন্ম বিজয়ী হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিজয়ী হয়েছে, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বিজয়ী হয়েছে, শহীদদের আকাঙ্ক্ষা বিজয়ী হয়েছে।'
শিক্ষার্থীদের দেওয়া আমানতের যথাযথ মর্যাদা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নবনির্বাচিত ভিপি বলেন, 'আমরা কথা দিচ্ছি, আমাদের শিক্ষার্থীদের যে স্বপ্নের ক্যাম্পাস, সেই স্বপ্নের ক্যাম্পাস বিনির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামবো না। আমরা আমাদের লড়াই চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।'
তিনি আবাসন, খাদ্য, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার মতো মৌলিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ একাডেমিক ও গবেষণাবান্ধব পরিবেশ তৈরির অঙ্গীকার করেন।
ডাকসুর ভিপি হিসেবে নয়, বরং শিক্ষার্থীদের ভাই ও বন্ধু হিসেবেই পরিচিত হতে চান সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আমি ডাকসুর ভিপি হিসেবে পরিচয় দিতে চাই না। আমি আমার বোনের একজন ভাই হিসেবে, আমার ছোট ভাইয়ের বড় ভাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। আমার বন্ধুর একজন বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতে চাই। আমার শিক্ষকের একজন ছাত্র হিসেবে আমি আমাকে পরিচয় দিতে চাই।'
তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, 'সাদিক কাইয়ুমকে আপনারা যেভাবে দেখেছেন, ডাকসুর ভিপি হওয়ার পরেও তার কোনো পরিবর্তন হবে না ইনশাআল্লাহ।'
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অন্য প্রার্থীদের 'সহযোদ্ধা' হিসেবে উল্লেখ করে সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি বহুত্ববাদী ও নিরাপদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি দল-মত নির্বিশেষে সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করবেন। তিনি বলেন, 'এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেই ধর্মের, যেই পথের, যেই মতের, যে আদর্শের লোক না হোক না কেন, আমরা সবাই একসাথে কাজ করবো। আমরা এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটা মাল্টিকালচারাল ইনস্টিটিউট হিসেবে আমরা বিনির্মাণ করবো।'
একইসাথে তিনি ডাকসু নির্বাচন সফল করতে ভূমিকা রাখায় গণমাধ্যমকর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী এবং নারী শিক্ষার্থীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এদিকে ডাকসু নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে নিজের বিজয়কে ব্যক্তিগত অর্জন হিসেবে দেখতে নারাজ এস এম ফরহাদ। তিনি বলেছেন, এই জয় ব্যক্তি ফরহাদ বা ছাত্র শিবিরের নয়, বরং এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর বিজয় এবং তাদের দেওয়া একটি পবিত্র আমানত। তিনি এই জয়কে আনন্দ উদযাপনের উপলক্ষ না ভেবে, নিজের জন্য 'আমানতদারিতার পরীক্ষার পালা' হিসেবে অভিহিত করেছেন।
নবনির্বাচিত জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, 'জিএস হিসেবে নির্বাচিত হওয়া এটা ব্যক্তি ফরহাদ কিংবা ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি ফরহাদের কোনো অর্জন না। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে প্রদত্ত একটি আমানতের দায়ভার আমার উপর।'
দায়িত্বে থাকাকালীন নিজের যেকোনো ভুল-ত্রুটির জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে জবাবদিহি করার এবং তাদের দ্বারা সংশোধিত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, 'আমার পথচলায় কোনো ভুল করলে বা ভুল পথে পা বাড়ালে শিক্ষার্থীরা যেন আমাকে সাথে সাথে ভুল শুধরে দেন এবং সমালোচনার কাঠগড়ায় দাঁড় করান।'
বিজয় মিছিল বা আনুষ্ঠানিক কোনো বিজয় র্যালি না করার কথাও জানান নবনির্বাচিত জিএস। তিনি বলেন, 'এটি আমাদের আনন্দের পালা নয়, এটি বরং আমাদের আমানতদারিতার পরীক্ষার পালা। আমরা শিক্ষার্থীদের সেই আমানত আদৌ রক্ষা করতে পারব কি না, সেই পরীক্ষা।'
তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের অধিকার বাস্তবায়ন এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে যাবেন।