ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন, পানি সমস্যা সমাধান ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের চেষ্টা করবে বিএনপি: টিবিএসকে ফখরুল
বিএনপি প্রতিটি দেশের সঙ্গেই সুসম্পর্ক বজায় রাখার নীতিতে বিশ্বাস করে উল্লেখ করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি ভারতের সঙ্গে কার্যকরী সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের নির্বাহী সম্পাদক শাখাওয়াত লিটনের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তার এই সাক্ষাৎকারের তৃতীয় পর্বে বিএনপির পররাষ্ট্র নীতির অগ্রাধিকারগুলো তুলে ধরা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'প্রতিটি দেশের সঙ্গেই আমরা সুসম্পর্ক রাখার নীতিতে বিশ্বাস করি। ভারত আমাদের বড় প্রতিবেশী। আমরা চেষ্টা করব তাদের সঙ্গে ফাংশনাল রিলেশনশিপ (কার্যকরী সম্পর্ক) আরও উন্নতি করার। বিশেষ করে আমরা চেষ্টা করব ভারতের সঙ্গে আমাদের পানি সমস্যা সমাধান, সীমান্তে হত্যা সম্পূর্ণ বন্ধ করা ও ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা ব্যালান্স নিয়ে আসার।'
'দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারতের তরফ থেকে এ বিষয়ে আমরা কোনো আমন্ত্রণ পাইনি। খুব একটা আগ্রহও দেখিনি। এটা একটা বাধা হয়ে আছে', যোগ করেন ফখরুল।
মির্জা ফখরুল প্রতিটি দেশের সঙ্গেই, বিশেষ করে প্রধান উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার কথা উল্লেখ করে বলেন, তার দল চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ককে বিএনপি ইতিবাচক হিসেবে দেখে বলেও উল্লেখ করেন বিএনপির এই নেতা।
শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, 'ওটা তো একটা সমস্যা, নিঃসন্দেহে। গণহত্যার আসামিকে আশ্রয় দেওয়াটা আমাদের গোটা জাতির জন্য ভালোভাবে দেখি না।'
দেশের অভ্যন্তরীণ অগ্রাধিকারের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় গেলে বিএনপির প্রথম কাজ হবে আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে এর কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন বাজেট পেশ করতে হবে। বিএনপির এ বিষয়ে প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের দল এ বিষয়ে প্রস্তুত রয়েছে।
আর্থিক লুটপাট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান সরকার ব্যাংক খাতে যে লুটপাট ছিল, সেটি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। আর টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারটা এত সহজ নয়। তবে আমরা নিশ্চয়তা দিতে পারি, আমরা কোনো লুটপাট অ্যালাউ করব না। অর্থনীতি তার নিজস্ব গতিতে চলবে। আমরা ফ্রি মার্কেট ইকোনমিতে বিশ্বাস করি। তাই আমরা বেসরকারি বিনিয়োগকে বেশি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করব। আমরা বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করব।
স্বাস্থ্যখাত প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয় করার বিষয়ে বিএনপির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং এটিকে জনগণের কাছে একটি মূল অঙ্গীকার বলে অভিহিত করেন। শিক্ষা বিষয়ে তিনি বলেন, যদিও একটি পূর্ণাঙ্গ নীতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে তার দল অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠানে অহেতুক ব্যয় কমিয়ে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক কৃষি শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেবে।
ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, তিনি আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চান। 'একই সঙ্গে, আমি দেখতে চাই দেশের অর্থনীতি তার ভিত্তি খুঁজে পেয়েছে, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে এবং বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির উন্মেষ ঘটছে।'
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে টিবিএস মাল্টিমিডিয়ার বিশেষ আয়োজন রোড টু ইলেকশন নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের তিন পর্বের ধারাবাহিকের শেষ পর্ব এটি।