অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা পুনর্বহাল দাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের, জাকসু নির্বাচনে প্রশাসনিক অনিয়মের অভিযোগ

আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী অমর্ত্য রায় জনের প্রার্থিতা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, 'বহু বছর পর অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনের যে আশা তৈরি হয়েছিল, প্রশাসনিকভাবে তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কলুষিত করেছে এবং এটি বিদ্যমান প্রশাসনিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ।'
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'অমর্ত্য রায় ছিলেন সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেলের প্রার্থী। দীর্ঘ নির্বাচনী প্রক্রিয়া পেরিয়ে গত ২৯ আগস্ট চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়, যেখানে তার নাম অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু নির্বাচনের মাত্র চারদিন আগে ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে জানায় যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী নন।'
আরো বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া আইন ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছে। নির্বাচন কমিশন তার সিদ্ধান্তে জাকসুর গঠনতন্ত্রের ৪ ও ৮ ধারা উল্লেখ করলেও, কোথাও পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেনি ঠিক কোন উপধারার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আচরণ বিধিমালার ২১ ধারায় প্রার্থীর আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও অমর্ত্য রায়কে সেই সুযোগ দেওয়া হয়নি।
বিবৃতিতে শিক্ষক নেটওয়ার্ক প্রশ্ন তুলে বলেছে, '১৭ আগস্ট থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়ায় যখন অমর্ত্য রায় বৈধ ভোটার ও প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছেন, তখন কীভাবে ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে তার শিক্ষার্থী বাতিল বলে দাবি করা হলো?'
আরো প্রশ্ন করা হয়, 'এটা কি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি নয়? প্রশাসনের ভুলের দায় একজন শিক্ষার্থী কেন বহন করবেন?'
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, অমর্ত্য রায় নিয়মিত শিক্ষার্থী নন।
তবে এর বিপরীতে গত ৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, বিশেষ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে অমর্ত্যকে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ভর্তির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছেন। এমনকি ১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত শিক্ষা পর্ষদের সুপারিশেও বিষয়টি সুস্পষ্ট ছিল।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ
শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'নির্বাচন কমিশন নিজেই তাদের সিদ্ধান্তে আস্থা রাখতে পারছে না। তারা যখন চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছে, তখন আর কোনোভাবেই প্রার্থিতা বাতিলের অধিকার তাদের নেই। এ রকম সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের '
তারা এই সিদ্ধান্তকে 'প্রশাসনিক নির্যাতন' এবং 'গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের চেষ্টা' বলে অভিহিত করে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে।
এদিকে অমর্ত্য রায়ের প্রার্থিতা পুনর্বহাল চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও জাকসু নির্বাচন কমিশনকে আজ রোববার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন।