আদালতে বিচারকের সামনে সাংবাদিককে মারধর
ঢাকার ম্যাট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারকের সামনেই এক সাংবাদিকের ওপর আইনজীবীদের হামলার অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিব উল্লাহ পিয়াসের আদালত আসামিদের জামিন চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিকের নাম আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম। তিনি বেসরকারি টেলিভিশন 'সময় টিভি'র সাংবাদিক।
জানা গেছে, এদিন শাহবাগ থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় সাংবাদিক মঞ্জুরুল আলম পান্নাকে আদালতে আনা হয়। বিচারক আদালতে আসার পরে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, আইনজীবী ও সাংবাদিক ছাড়া অন্যদের আদালত কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়। এসময় কয়েকজন আইনজীবী সাংবাদিকদেরও ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। এসময় মোক্তাদির রশীদ রোমিও নামে এক সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান পান্নার কাছে জানতে চান, কারাগারে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে কি না।
এসময় এজলাসের বেঞ্চে বসে থাকা আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি আসামির সঙ্গে কথা বলার কারণ জিজ্ঞাসা করেন। বিষয়টা নিয়ে কিছুটা তর্ক-বিতর্ক হয় তাদের। এসময় তাকে আদালত থেকে বের হয়ে যেতে বলেন অ্যাডভোকেট মহিউদ্দিন।
ওই সাংবাদিক তার কাছে জানতে চান,'আপনি কোর্ট ইন্সপেক্টর কি না? আমাকে বেরিয়ে যেতে বলছেন। বিচারক বললে আমি বেরিয়ে যাব।'
'এর মাঝে শাহবাগ থানার একটি মামলার শুনানি শুরু হয়। এসময় একটু দূরে দাড়িয়ে থাকা সাংবাদিক সিয়াম এসে ওই আইনজীবীকে বলেন, উনি বহিরাগত না, একজন সাংবাদিক। একথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বেঞ্চ থেকে লাফ দিয়ে উঠেই কানের ওপর ঘুষি মারেন। এসময় সিয়াম তার হাতে থাকা সময় টিভির মাইক্রোফোন উঠিয়ে আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেন। তবে ওই আইনজীবী তাকে টেনেহিঁচরে নিয়ে আসেন। সিয়াম কিছু বুঝে ওঠার আগেই ওই আইনজীবীর কয়েকজন সহযোগী তাকে ঘিরে ধরে মারধর শুরু করেন। এতে আহত হন সিয়াম। পরে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।'
'আদালত কক্ষে এ পরিস্থিতি দেখে এজলাস থেকে নেমে খাসকামড়ায় চলে যান বিচারক। এসময় প্রসিকিউশনের পক্ষে থাকা কাইয়ুম হোসেন নয়ন ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করে তাকে সাক্ষীর কাঠগড়ার কাছে নিয়ে যান।'
এ বিষয়ে সাংবাদিক সিয়াম বলেন, 'কোনো কারণ ছাড়াই বিচারকের সামনে মব সৃষ্টি করে আমাকে মারধর করল কয়েকজন আইনজীবী। আমি এঘটনার বিচার চাই।'
বেলা ৩ টা ২৫ মিনিটের আবার এজলাসে আসেন বিচারক। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত লতিফ সিদ্দিকী এবং সাংবাদিক পান্নার জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
এদিন লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ কামরুল হোসেন ও ইফফাত জাহান রনি জামিন চেয়ে আবেদন করেন। সাংবাদিক পান্নার পক্ষে ফারজানা ইয়াসমিন রাখী জামিন আবেদন করেন।
সাংবাদিক মোক্তাদির রশীদ রোমিও বলেন, 'হেলমেট, হ্যান্ডকাফ ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে পুলিশের বাঁশি ফু দিতে দিতে আদালতে হাজির করা হয় সাংবাদিক পান্নাকে। তাকে প্রচণ্ড বিধ্বস্ত দেখেছি। হেলমেট খোলার পরে পান্না পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন আপনারা এমন কেন করছেন, আমি তো আপনাদের শত্রু নই।'
তিনি বলেন, 'এ সময়ে কাছে দাঁড়িয়ে থাকায় আমি সাংবাদিক পান্নাকে জিজ্ঞেস করি ভাই আপনাকে কি জেলের ভেতরে নির্যাতন করা হয়েছে? সাংবাদিক পান্না জবাবে না বলেন।'
তিনি আরও বলেন, 'ঠিক এ সময় আইনজীবী মহিউদ্দিন মাহি আমাকে কোর্ট থেকে বের হয়ে যেতে বলে ধমকাতে থাকেন। আমি বলি আদালত কক্ষ থেকে বের করে দেওয়ার ক্ষমতা কেবল বিচারকের আছে। উনি বললে বের হয়ে যাব। উনাকে বলতে দিন। একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই ওই আইনজীবী আমাকে মারতে উদ্যত হলে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সময় টেলিভিশনের সাংবাদিক আসিফ মোহাম্মদ সিয়াম তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।'
সাংবাদিক মোক্তাদির রশীদ রোমিও বলেন, 'কোর্টের নিয়ম রক্ষার জন্য সিয়াম ওই আইনজীবীকে অনুরোধ করেন। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই আইনজীবী সাংবাদিক সিয়ামকে মারতে শুরু করেন। আর আমাকে গালাগাল করেন।'
ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাইয়ুম হাসান নয়ন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, 'আদালত কক্ষে শুনানির আগে হঠাৎই হট্টগোল শুরু হয়। একজনকে মারধর করতে দেখে আমি গিয়ে তাকে সেইভ করার চেষ্টা করি। সেখানে আসলে কী হয়েছিল সে বিষয়ে আমি নিশ্চিতভাবে জানি না।'
