সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, জনমতের প্রতিফলনে পিআর পদ্ধতি জরুরি: ইসলামী আন্দোলন

সংস্কার ও বিচার ছাড়া সুুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না বলে মনে করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে জনমতের প্রতিফলনের জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন জরুরি বলে জানিয়েছে দলটি।
আজ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন্দ।
এর আগে বিকেল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় সাতটি রাজনৈতিক দল ও হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে এ বৈঠক শুরু হয়। রাজনৈতিক দলগুলো হলো নাগরিক ঐক্য, গণসংহতি আন্দোলন, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, এলডিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও জাতীয় গণফ্রন্ট।
অধ্যাপক আশরাফ বলেন, 'গত ৫৩ বছরে জনমতের প্রতিফলন হয়নি। যেই লাউ সেই কদু করে ট্র্যাডিশনাল পদ্ধতিতে নির্বাচন করলে জনমতের প্রতিফলন হবে না।'
পিআর পদ্ধতির কথা উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ৩১টি দলের মধ্যে ২৬টি দল পিআর পদ্ধতির পক্ষে। বিশ্বের ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতি আছে। এটা সুষ্ঠুভাবে জনমতের প্রতিফলন ঘটায়। ৫৩ বছরের জঞ্জাল দূর করার জন্য পিআর পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে পিআর পদ্ধতি হবে কি না, সেজন্য গণভোট হতে পারে।
দেশের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে, কোনো উন্নতি হয়নি দাবি করে অধ্যাপক আশরাফ বলেন, বৈঠকে এ নিয়েও কথা হয়েছে। সংস্কার ও বিচার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলেও এ সময় মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগের যে পরিণতি হয়েছে, একইসঙ্গে আমরা জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রমও নিষিদ্ধ চাই।'
অধ্যাপক আশরাফ আরও বলেন, 'প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টি নিজে নোট করেছেন। তিনি বলেছেন, একটি অপশক্তি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।'
প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়ার দাবি হেফাজতে ইসলামের
বৈঠক শেষে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, 'নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার বিষয়ে আমরা বলেছি। সেইসঙ্গে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের দোসরদের গ্রেপ্তার এবং এখনো প্রশাসনে থাকা আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছি।'
তিনি বলেন, আজ আমরা দাবি জানিয়েছি সংবিধানের মূলনীতিতে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস কথাটি ফিরিয়ে আনতে। এছাড়াও ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের ওপর চালানো গণহত্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
এদিকে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার জিজ্ঞাসা ছিল নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য কী কী করা যেতে পারে। আমরা সেই বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় যেমন, প্রশাসনিক ব্যবস্থা এখনো এই সরকার ঠিক করতে পারেনি।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা যেভাবে লটারি ব্যবস্থায় পুলিশ ও প্রশাসন সাজানোর কথা বলেছেন, সেটি শিশুসূলভ কথা। কারণ, কিছু জায়গা আছে ভালনারেবল, সেখানে সেভাবে বদলি ও স্থানান্তর করতে হবে। সেটা লটারির মাধ্যমে যথোপযুক্ত নয়।
তিনি আরো বলেন, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে আলোচনা হয়নি।
পিআর পদ্ধতির বিষয়ে তিনি বলেন, 'ইতালি, নেপালে আমরা দেখতে পাই পিআর পদ্ধতি সাকসেসফুল না।'
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে কমিটি গঠনের প্রস্তাব গণসংহতি আন্দোলনের
এদিকে নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি এবং নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন।
দলটির প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দুটি বিষয়ে বলেছি। একটি হলো নির্বাচনী পরিবেশ, আর অন্যটি হলো বিচার ও সংস্কার।
তিনি বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক রাখতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে অংশ নেওয়া দলগুলো নিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রীক একটি সমন্বয় কমিটি করা যেতে পারে। আমরা এই কমিটি চলতি সেপ্টেম্বরেই গঠনের পরামর্শ দিয়েছি। উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট কোনো কাঠামোর কথা বলেননি। এটা আমাদের প্রস্তাব ছিল, অন্য দলগুলোও সমর্থন করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই সরকার যেভাবে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের পুনর্গঠন করেছে, তা যথার্থ হয়নি। এজন্য বিভিন্ন জায়গায় অসুবিধা হচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এতে নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
বিচার ও সংস্কার বিষয়ে তিনি বলেন, বিচার দৃশ্যমান করা যেমন জরুরি, তেমনি সংস্কার কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, সেটাও জরুরি। যেসব সংস্কার প্রস্তাবে আমরা একমত হয়েছি, যেটা সংবিধান সংশ্লিষ্ট নয়, সেগুলো এখনই অধ্যাদেশ জারি করে বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আর যেগুলো সংবিধান সংশ্লিষ্ট কিন্তু ঐকমত্য হয়নি, সেগুলোর ফয়সালা জনগণ করবে।
এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু বলেছেন, সরকারের নিয়ন্ত্রণ, দৃঢ়তা ও কর্তৃত্ব নিয়ে কথা বলেছি। এটা প্রতিষ্ঠা না হলে নির্বাচন নিয়ে সংশয় থাকবেই। আমরা এ বিষয়ে জাতীয়, জেলা ও উপজেলাপর্যায়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে একটা সমন্বয় কমিটির কথা বলেছি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলেছি। তাদের কারো সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার অভিজ্ঞতা নেই। আমরা বলেছি সাবেক রিটার্নিং অফিসারসহ যাদের অভিজ্ঞতা আছে, তাদের প্রয়োজনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন আমরা নোট নিয়েছি। আমাদের টিম এগুলো পর্যালোচনা করবে এবং আমাদের ফিডব্যাক ও ফলোআপ জানাবেন।
জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চায় গণঅধিকার পরিষদ
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান মনে করেন, জাতীয় পার্টির (জাপা) কাঁধে ভর করে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও দেশে ফিরে আসবেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'জাপার কাঁধে ভর করে আপা (শেখ হাসিনা) ফিরে আসবে। দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা ও ভারত চেষ্টা করছে জাতীয় পার্টিকে বিরোধীদল বানানোর। আমরা জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের নিবন্ধন স্থগিতের দাবি জানিয়েছি৷ আমরা বলেছি, আওয়ামী লীগকে যেভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, একই প্রক্রিয়ায় ১৪ দল ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যারা এই মুহূর্তে প্রশাসনে আছে, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, তারা এই সরকারের আনুগত্য করছে কি না, তা জানতে চেয়েছি। যে কারণে আমরা বলেছি, পাশাপাশি দুটি সরকার চলছে। একটি দৃশ্যমান, আরেকটি অদৃশ্য। আমরা জানতে চেয়েছি এই মুহূর্তে সংবিধান আছে কি নেই। সংবিধান, সংস্কার ও গণভোট নিয়েও সরকারের ভাবনা স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছি।