জাকসু নির্বাচন ঘিরে কেন 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেল, যা জানালেন ভিপি ও জিএস পদপ্রার্থী

৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে ইতোমধ্যে প্যানেল ঘোষণা করছে 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেল। বামপন্থী সংগঠন, সাংস্কৃতিক জোট, আদিবাসী শিক্ষার্থী, বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেলের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমেছে 'সম্প্রীতির ঐক্য'। এতে এখন পর্যন্ত ঘোষিত প্যানেলগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ১১ জন নারী প্রার্থী, ৭ জন আদিবাসী, ৬ জন সনাতন ধর্মাবলম্বী, ৩ জন বৌদ্ধ ও ২ জন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বী প্রার্থী রয়েছেন।
সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও প্রত্নতত্ম বিভাগের শিক্ষার্থী অমর্ত্য রায়। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে লড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি এবং নাটক ও নাট্যতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান।
প্যানেলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস-পুরুষ) পদে নুর এ তামীম স্রোত এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (এজিএস-নারী) পদে ফারিয়া জামান নিকি, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে সুকান্ত বর্মন, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক পদে সোমা ডুমরী এবং সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে আতিকুর রহমান জনি মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে রাহাতুল ফেরদৌস রাত্রি, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে মায়মুনা বিনতে সাইফুল, নাট্য সম্পাদক পদে ইগিমি চাকমা, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (নারী) পদে প্রত্যাশা ত্রিপুরা এবং সহ-ক্রীড়া সম্পাদক (পুরুষ) পদে রেংথ্রি ম্রো মনোনীত হয়েছেন।
প্যানেলে তথ্য-প্রযুক্তি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে মো. মাহফুজ আহমেদ, সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক পদে আবরার হক বিন সাজেদ, সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (নারী) পদে মায়িশা মনি, সমাজসেবা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক (পুরুষ) পদে মো. তাজুন ইসলাম, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে লাবিবা মুবাশশিরা ইশাদি এবং পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে সীমান্ত বর্ধন মনোনীত হয়েছেন।
এছাড়া, কার্যকরী সদস্য (নারী) পদে আরিফা জান্নাত মুক্তা, আনিকা তাবাসসুম ফারাবী এবং আদৃতা রায়, কার্যকরী সদস্য (পুরুষ) নিহ্লা অং মারমা, সৈকত কুমার কানু, চুই থুই প্রু মারমা এবং মো. এরফানুল ইসলাম ইফতু।
নির্বাচন ঘিরে 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেলের ভাবনা কী?
ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় বলেন, 'আমরা সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করেছে। এবারের জাকসু নির্বাচন সকলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হোক, এটাই আমাদের সকলের চাওয়া।'
তিনি বলেন, 'তবে নির্বাচনে ঘিরে প্রশাসনের গাফিলতিগুলো আমাদের চোখে পড়ছে। অনলাইন বিভিন্ন পেইজগুলো থেকে প্রার্থীদের হেনস্তা করা,অনলাইন বুলিংয়ের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। এছাড়াও, অনেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুমে গিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন, যদিও এই সম্পর্কে নির্বাচন আচরণবিধি কী বলে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।'
অন্যদিকে জিএস পদপ্রার্থী শরণ এহসান বলেন, '৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে দেশের আপামর ছাত্র-জনতার মাঝে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে যে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তৈরি হয়েছিলো, সেই ভাবনা আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে আমরা সে অবস্থানে নিজেদেরকে ধরে রাখতে পারিনি। সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল নতুন করে জাহাঙ্গীরনগরকে শিক্ষা ও গবেষণার সূতিকাগার গড়ে তোলার আশ্বাস থেকে সেই সম্প্রীতি ও বৈচিত্র্যময় পরিবেশ তৈরি করতে চায়। সেই চাওয়া থেকেই আমাদের সকলের একত্রিত হওয়া।'
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনে আমরা সকল জাতি-ধর্ম-বর্ণের প্রতিনিধি নিয়ে যে প্যানেল সাজিয়েছি, সেই প্যানেল জাকসুর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক ও সহনশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশ তৈরি করতে পারবে বলে আমরা আশাবাদী। এজন্য আমরা সকলকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি, নির্বাচনী প্রচারণা করছি এবং আশা রাখি, ১১ তারিখ সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলেই সর্বোচ্চ ভোট পড়বে।'
নির্বাচন ঘিরে প্যানেলের কী প্রত্যাশা?
ভিপি পদপ্রার্থী অমর্ত্য রায় বলেন, 'সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেল চায়, জাকসু নির্বাচনে এমন প্রার্থীরাই জিতে আসুক যারা সকল মতের সমতা বিধান করতে পারবে, এমন প্রার্থীই জিতুক যারা শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা কাঠামোতে সমতা বিধান করতে পারবে। এর মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার গতিপথ নির্ধারণ করবে। আমাদের সকলের দাবি-দাওয়াগুলো যেন পূরণ হয়, স্টুডেন্টদের ম্যান্ডেট যেন পূরণ হয়। শিক্ষার পরিবেশ ঠিক রাখাসহ গবেষণা বৃদ্ধি, প্রকৃতি পরিবেশ রক্ষাসহ ছাত্র প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সিনেটে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব যেন বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনের কাতারে নিয়ে যাওয়া যায়।'
অন্যদিকে শরণ এহসান তার প্রত্যাশা নিয়ে বলেন, '৩৩ বছর পর জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। জাকসুর মধ্য দিয়ে নতুন জাহাঙ্গীরনগর আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশে ও দেশের বাইরে পরিচিতি লাভ করুক।'
'সম্প্রীতির ঐক্য' শিক্ষার্থীদের কাছে কী আশা করে?
অমর্ত্য রায় বলেন, 'শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণমূলক আচরণই আমরা শিক্ষার্থী কাছে আশা করি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে হওয়া ভোটের মাধ্যমেই সম্ভব যোগ্য প্রার্থীদের জাকসুতে সুযোগ দেওয়ার। আমরা ভোটদানের পদ্ধতিকে সহজ করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে আসুক এই আমাদের প্রত্যাশা, তাদের অংশগ্রহণ না থাকলে হয়তো তাদের ম্যান্ডেটের জন্য প্যানেল গুলো কাজ করবে না।'
শরণ এহসান বলেন, 'আমরা আশা করি, সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশ পুনর্নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করবে।'
শিক্ষার্থীরা 'সম্প্রীতির ঐক্য' প্যানেলে কেন ভোট দেবেন?
অমর্ত্য বলেন, 'আমরা পূর্বেও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি-দাওয়ার আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলাম। আমরা আমাদের ইশতেহারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা, গবেষণা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও প্রতিবেশ, সামাজিক সুরক্ষা বলয়, ধর্মীয় অধিকার নিয়ে আমাদের রূপরেখা প্রকাশ করেছি। আমরা শিক্ষার্থীদের সরাসরি মতামত ও অংশগ্রহণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।'
তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে আন্দোলন করে আসছি। কারণ আমরা বিশ্বাস করি, টেকসই উন্নয়ন ছাড়া একটি আধুনিক ও মানবিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা সম্ভব নয়। সর্বোপরি আমাদের লক্ষ্য শুধু আজকের সমস্যার সমাধান নয় বরং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি পরিকল্পিত ও প্রগতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় নিশ্চিত করা। গণতান্ত্রিক চর্চা, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমরা এমন এক জাহাঙ্গীরনগর গড়ে তুলতে চাই যেখানে সমতা, নিরাপত্তা ও মানবিকতা সবার জন্য নিশ্চিত থাকবে। আমরা তাই মনে করি শিক্ষার্থীরা আমাদের ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।'
শরণ বলেন, 'আমি মনে করি শিক্ষার্থীরা এবারের জাকসুতে যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে কার্পণ্য করবেন না৷ সেখানে সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের প্রতিটি সদস্য নতুন জ্ঞান উৎপাদনের কারখানা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে জাহাঙ্গীরনগরকে আদর্শিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। শিক্ষার্থীরা এ কারণেই আমাদেরকে যোগ্য মনে করে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন।'