রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে আজ বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিচার্জে গণঅধিকার পরিষদের নেতা ও সাবেক ডাকসু ভিপি নুরুল হকে নুরের আহত হওয়ার ঘটনায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ রোববার (৩১ আগস্ট) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গতকাল গণমাধ্যমকে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টা আজ বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পৃথকভাবে বৈঠক করবেন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠকগুলো অনুষ্ঠিত হবে।
বৈঠকের সময়সূচি অনুযায়ী, বিএনপির সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিকাল সাড়ে ৪টায় ও এনসিপির সন্ধ্যা ৬টায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলের মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। মহাসচিব ছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র নেতারা বৈঠকে থাকবেন।
বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির একটি সূত্র জানায়, বৈঠক ডেকেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৈঠকের এজেন্ডা তারা ঠিক করবে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপিকে কিছু জানানো হয়নি।
বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে হয়তো আলাপ হতে পারে।
এদিকে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে দলটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল বৈঠকে অংশ নেবে। প্রতিনিধিদলে থাকবেন দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আযাদ।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চার সদস্যের প্রতিনিধিদলে থাকবেন দলটির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা এবং সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদ।
এর আগে গতকাল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সব রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তির প্রতি ঐক্যের আহ্বান জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, 'আমাদের সংগ্রামের অর্জন রক্ষা করতে, জনগণের ম্যান্ডেটের বিরুদ্ধে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ করতে এবং গণতন্ত্রে আমাদের সফল রূপান্তর নিশ্চিত করতে এই ঐক্য অপরিহার্য।'
বিবৃতিতে সরকার গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছে, 'এই ধরনের সহিংসতা কেবল জনাব নুরের ওপরই নয়, বরং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামে জাতিকে একত্রিত করা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেতনার ওপরও একটি আঘাত।'
সরকার এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস দিয়ে বলেছে, 'কোনো ব্যক্তি, তার প্রভাব বা অবস্থান নির্বিশেষে, জবাবদিহিতা থেকে অব্যাহতি পাবে না।'
বিবৃতিতে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে সরকার তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে জানায়, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে পুনরায় নিশ্চিত করছে যে, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। এটি বাংলাদেশের জনগণের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পবিত্র অঙ্গীকার।'
এদিকে গণঅধিকার পরিষদ গতকাল জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান গতকাল ঝিনাইদহে সাংবাদিকদের বলেন জাতীয় পার্টি ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত দেশের মানুষের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি করেছে এবং রক্ত নিয়ে খেলেছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, জাতীয় পার্টি জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগের সহযোগিতা করে তাদের সেই পুরনো ইতিহাস উন্মোচন করেছে। তাই দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে। এ বিষয়ে আইনগত দিক যাচাই-বাছাই করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এদিকে অকস্মাৎ রাজনৈতিক অঙ্গনে যথাসময়ে নির্বাচন হবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালের জন্য একটি গোষ্ঠী চেষ্টা করছে।
তাছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়েও দলগুলোর মধ্যে মতভিন্নতা দেখা দিয়েছে। সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে জামায়াত ও এনসিপি অনেক বিষয়ে একমত হলেও বিএনপির সঙ্গে তাদের মতপার্থক্য বেশি।
বিএনপি আগামী সংসদের মাধ্যমে সাংবিধানিক সংস্কারের বাস্তবায়ন চায়। অন্যদিকে জামায়াত ও এনসিপি চায় নির্বাচনের আগেই সংস্কারের বাস্তবায়ন।