গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাদ দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়: খলিলুর রহমান

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সব পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করার গুরুত্ব তুলে ধরে রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, 'কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাদ দিয়ে এই সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।'
তিনি বলেন, 'আমি সবার সঙ্গে কথা বলেছি। যদি না বলি, তাহলে কোনো সমাধান হবে না। আমি এখন আপনাদের সঙ্গে কথা বলছি, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গেও কথা বলেছি। আমাদের এই কাজ করতে হবে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।'
সোমবার (২৫ আগস্ট) রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে কক্সবাজারে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন খলিলুর রহমান।
মিয়ানমারের গণমাধ্যম, সরকার, সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির সঙ্গে কথা বাংলাদেশ সরকার যোগাযোগ করেছে কিনা— এই প্রশ্নের জবাবে মিয়ানমারের এক সাংবাদিককে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে এক সাংবাদিক বন্ধুকে দেখে আমি খুব খুশি হয়েছি। আপনারা আসতে থাকুন, আরও নিয়ে আসুন।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বলেন, 'কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ পক্ষকে বাইরে রেখে সমাধান করা সম্ভব নয়, এটিই বাস্তবতা। আলোচনা মানেই সেটি যেকোনো সমাধানের জন্য, আর সেই সমাধান সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে।'
'যদি কোনো পক্ষকে বাইরে রাখা হয়, তাহলে কোনো চুক্তি বাস্তবায়িত হবে না বা খুব দ্রুত ভেঙে পড়বে। তাই আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার দরজা খোলা রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
এদিকে, ২০১৭ সালে শেখ হাসিনা সরকারের ব্যর্থতার কারণে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া কোনো সমাধান সম্ভব নয়। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের ওপর গুরুতর অর্থনৈতিক ও সামাজিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, যা সক্রিয় আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার মাধ্যমে অবশ্যই মিয়ানমারকেই সমাধান করতে হবে।
তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি ১৯৭৮ সালে কুতুপালং ক্যাম্পের প্রথম ক্যাম্প ইনচার্জ ছিলাম এবং আমার রোহিঙ্গা বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করেছি। সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে এবং তা তাদের উদ্যোগেই সমাধান করতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মহাসচিব মিয়া গোলাম পরওয়ার, এবি পার্টির নেতা আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া ফুয়াদ, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা আখতার হোসেনসহ অনেকে এই সেশনে বক্তব্য রাখেন।
রাশেদ খান বলেন, আমরা চাই চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিক। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সবাই মিলে মিয়ানমারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হবে।
জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার জানান, তার দল রোহিঙ্গা সংকটের মানবিক সহায়তা, ন্যায়বিচার ও টেকসই সমাধানের পক্ষে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করবে।
আখতার হোসেন বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য ন্যায়বিচার চাই। নিরাপদে মিয়ানমারে ফেরত না যাওয়া পর্যন্ত তাদের খাদ্য, শিক্ষা ও মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে, রোববার (২৪ আগস্ট) কক্সবাজারে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন 'স্টেকহোল্ডারস ডায়ালগ: টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন' শুরু হয়। রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।