আগামীকাল থেকে ৩ জাহাজে সেন্টমার্টিন যাত্রা শুরু, মানতে হবে কঠোর নির্দেশনা
দীর্ঘ আলোচনা, নীতি নির্ধারণ ও সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়া শেষে অবশেষে বহুল প্রতীক্ষিত প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) থেকে পর্যটক নিয়ে দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করবে ৩টি জাহাজ। একইসঙ্গে আরও ৪টি জাহাজ প্রস্তুত রয়েছে এবং প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে সেগুলোও পর্যায়ক্রমে চলাচল শুরু করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাহাজ মালিক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ-এর ঘাট থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত টানা দুই মাস পর্যটক নিয়ে সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল অব্যাহত থাকবে।
সেন্টমার্টিন রুটের পর্যটকবাহী জাহাজ মালিকদের সংগঠন 'সি ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ'-এর সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, 'আগামীকাল থেকে কর্ণফুলী এক্সপ্রেস, এমভি বার আউলিয়া ও কেয়ারি সিন্দাবাদ এই ৩ টি জাহাজ সকাল ৭ টায় যাত্রা শুরু করবে। ইতোমধ্যে যে সব পর্যটকরা টিকেট কেটেছেন জাহাজ কতৃপক্ষ তাদের ভ্রমণ অনুমতি সংগ্রহ করে করে দিচ্ছে। ৩ টি জাহাজ সকাল পর্যন্ত টিকেট বিক্রি করবে। ফলে মোট যাত্রীর সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারেছি না।'
যাত্রী সংখ্যার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, '২ হাজারের অধিক কোনো টিকেট বিক্রি করা হবে না। সরকারি সিদ্ধান্ত মেনেই চলবে জাহাজ।'
এদিকে ঘাটে প্রস্তুত থাকা অপর ৪টি জাহাজ হলো- এমভি বে ক্রুজ, এমভি কাজল, কেয়ারী ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন ও আটলান্টিক ক্রুজ।
জাহাজ চলাচলের অনুমতির বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, 'চারটি জাহাজ কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন নৌপথে চলাচলের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি পেয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন। আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন যাতায়াত করবে। তার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।'
পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, 'সেন্টমার্টিনে পর্যটক আসা-যাওয়ার সময় জাহাজগুলোকে কঠোর নজরদারিতে রাখা হবে। দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে দেওয়া হবে না। এ জন্য নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাট ও সেন্টমার্টিন জেটিঘাটে পৃথক তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।'
এর আগে সেন্টমার্টিন দ্বীপের অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় গত ২২ অক্টোবর ১২টি নির্দেশনাসহ দ্বীপটিতে ভ্রমণের ব্যাপারে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যটকদের যাতায়াত বন্ধ ছিল। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দ্বীপটিতে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন পর্যটকেরা। তবে সরকারি প্রজ্ঞাপন মতে, নভেম্বরে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় দ্বীপটি ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি- এ দুই মাস দ্বীপে রাত যাপনের সুযোগ থাকবে।
এছাড়া পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ১২টি নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো- বিআইডব্লিউটিএ এবং মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া সেন্টমার্টিন দ্বীপে কোনো নৌযান চলাচলের অনুমতি পাবে না। পর্যটকদের অবশ্যই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস এবং কিউআর কোড সংযুক্ত থাকবে। কিউআর কোড ছাড়া টিকিট নকল হিসেবে গণ্য হবে।
তথ্য অনুযায়ী, আগামী বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও ৯ মাসের জন্য দ্বীপে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এবারের মৌসুমে দ্বীপে ভ্রমণের সময়সূচি এবং পর্যটক উপস্থিতিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, পর্যটকদের ভ্রমণকালে রাতে সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি বা বারবিকিউ পার্টি করা নিষিদ্ধ। কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা ক্রয়-বিক্রয়, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক ও অন্যান্য জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি করা কঠোরভাবে নিষেধ। এছাড়া সৈকতে মোটরসাইকেল, সি-বাইকসহ যেকোনো মোটরচালিত যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
ভ্রমণকালে নিষিদ্ধ পলিথিন বহন করা যাবে না। একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক- যেমন চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, ৫০০ ও ১০০০ মিলিলিটারের প্লাস্টিক বোতল ইত্যাদি বহন নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের নিজস্ব পানির ফ্লাস্ক সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
