ভাঙা সড়ক, ভাঙা জীবন: আপনি কি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবেন?

ভাঙা সড়ক কি আমাদের সংবিধানে গ্যারান্টিযুক্ত জীবনের অধিকারের জন্য বড় হুমকি? আর ভাঙা সড়কের কারণে জীবনের ক্ষতি বা ব্যবসায়িক ক্ষতির জন্য কি আপনি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারেন?
প্রশ্নগুলো কি হাস্যকর শোনাচ্ছে? তবে উত্তরগুলো বিস্তারিত তথ্যের মধ্যেই নিহিত।
গ্রীষ্ম হোক বা বর্ষা, ধুলোয় ঢাকা ভাঙা সড়ক আমাদের ফুসফুসকে দুর্বল করে দেয়।
এপ্রিল যেন বছরের সবচেয়ে নিষ্ঠুর মাস। ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের অন্য স্থানে অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে তীব্র তাপদাহ অনুভূত হয়। বর্ষার আগমন বৃষ্টি নিয়ে আনন্দ দেয়, তবে যাত্রীদের জন্য এটি একবারে দুঃস্বপ্ন বয়ে আনে—সড়কের গর্ত। এসব গর্ত দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কখনো কখনো সড়কে চলাচল চাঁদে হাঁটার মতো মনে হয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত সড়কেরগুলোর ছবির জন্য আলাদা কোনো ক্যাপশন প্রয়োজন নেই। ছবিগুলো নিজেই বলছে কীভাবে মহাসড়কগুলো ক্রমে ভেঙে পড়ছে এবং মেরামতে দেরি হওয়ায় পণ্য ও যাত্রী চলাচল কঠিন হয়ে উঠছে।
সড়কে বিপদ সর্বদা লুকিয়ে থাকে—হোক সেটা মহাসড়ক, শহর বা গ্রামীণ এলাকা। এর ক্ষতির পরিমাণ হিসাব করা প্রায় অসম্ভব। দুর্ঘটনা থেমে নেই; নিহতের সংখ্যা কেবল পরিসংখ্যানে সীমাবদ্ধ। এসব মৃত্যু শুধুই দুর্ঘটনা নয়। এটি দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে গাড়ি চালানো, অতিরিক্ত ওভারটেক, সড়কের ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল ও ট্রাফিক আইন অমান্যের ফল।
দীর্ঘদিন ধরে এসব কারণকেই সড়ক দুর্ঘটনার মূল দোষ হিসেবে ধরা হয়। বারবার এই মৃত্যু প্রমাণ করে, মানুষের জীবনযাপনের অধিকার—যা সংবিধানে সুরক্ষিত—প্রায় অকার্যকর হয়ে উঠেছে।
একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু বাকি সদস্যদের জন্য কঠিন ভোগান্তি বয়ে আনে। যারা গুরুতর আহত অবস্থায় বেঁচে থাকে, তাদের জীবন কাটে ধুকে ধুকে।
ক্ষতির আরেকটি অংশ ধীরে ধীরে ঘটে। গর্ত ও ঝাঁকুনিপূর্ণ সড়ক পার হওয়ায় গাড়ির আয়ু কমে যায়, যা বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষতি বয়ে আনে। যাত্রীদের শারীরিক ক্ষতির কথাও উল্লেখ করা প্রয়োজন—বাঁক এবং ঝাঁকুনিপূর্ণ সড়ক পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা, স্পন্ডিলাইটিস বা ডিস্কের ক্ষতি এবং অন্যান্য গুরুতর সমস্যার জন্ম দেয়। আমরা সবাই ভাঙা জীবনের সঙ্গে বসবাস করি। উৎপাদনশীলতা কমে যায়, মানুষ আর্থিক কষ্টে পড়ে, ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সরকার আছে, সরকারের অনেক শাখা আছে। এর মধ্যে কিছু শাখা দায়িত্বশীল—শীতকালে ধুলো কমানো, এপ্রিলের তাপদাহ কমানো, সড়ক নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য। সমস্ত খরচের অর্থ করদাতারা প্রদান করেন।

নাগরিকরা প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য সড়কের ওপর ভরসা রাখেন। কিন্তু তারা যা পান তা হলো খারাপ সড়কে চলাচল করতে গিয়ে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। এটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নয়, বরং কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার কারণে ঘটে।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে: ভাঙা সড়কের কারণে যদি কোনো ক্ষতি হয়, নাগরিক কি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন?
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত জুলাইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ রায়ে স্পষ্ট করে বলেছে, নিরাপদ, চলাচলের উপযোগী ও ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করা সড়ক নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের অংশ। এছাড়া দেশের যেকোনো জায়গায় ভ্রমণ করার অধিকারও একটি মৌলিক অধিকার।
জীবন শুধু বেঁচে থাকার বিষয় নয়। বহু বিচারিক রায় অনুযায়ী, জীবনের অধিকার মানে কেবল বেঁচে থাকা নয়, বরং সেই সব প্রয়োজনও অন্তর্ভুক্ত যা মানুষের জীবন মর্যাদাপূর্ণ করতে সহায়তা করে—যেমন খাবার, পানি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও বাসস্থান। মানুষকে এগুলো পরিচালনার জন্য কাজ করতে হয়, চলাফেরা করতে হয়।
এই কারণেই ২০১৫ সালে বোম্বে হাইকোর্ট ঘোষণা করেন, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সড়ক মানুষের মৌলিক অধিকার—জীবনের অধিকার ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকারের অংশ।
রায়ে বলা হয়: 'এটি স্পষ্ট হওয়া উচিত যে, সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা সড়কের অধিকার মৌলিক অধিকার [জীবনের অধিকার ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার] এর অংশ। এবং এর লঙ্ঘনের কারণে যদি কোনো ক্ষতি হয়, নাগরিকদের ক্ষতিপূরণ দাবি করার অধিকার রয়েছে।'
২০১৯ সালে কর্ণাটক হাইকোর্টও একই রায় দেন। রায়ে বলা হয়, নাগরিকরা খারাপ ফুটপাথ বা সড়কের কারণে ক্ষতির শিকার হলে নগর বা পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারেন।
বোম্বে হাইকোর্ট এমন সিদ্ধান্ত দিয়ে আগে থেকেই নজির স্থাপন করেছেন। ২০১১ সালে একটি মামলায় নাসিকের ৪২ বছর বয়সী এক বাইকার খালে পড়ে মৃত্যু হলে রাজ্য সরকারকে ২ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আরও কিছু মামলায় আদালত নগর সংস্থাগুলোকে দায়িত্বহীনতা বা দায়িত্বে অবহেলার জন্য দায়ী ঘোষণা করে ক্ষতিপূরণ প্রদান করেছে।
ভারতের সংবিধানের ধারা ২১ এবং বাংলাদেশের সংবিধানের ধারা ৩২ উভয়ই জীবনের অধিকারকে একই মনোভাব নিয়ে সংজ্ঞায়িত করেছে।
তাহলে প্রশ্ন আসে, নিরাপদ সড়কে চলাচলের অধিকার আমাদের মৌলিক অধিকার হিসেবে ঘোষণা কেন করা হয় না?
"আমাদের সংবিধানে নিরাপদ সড়কের অধিকার স্পষ্টভাবে স্বীকৃত নয়, যা হাইকোর্ট থেকে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ সীমিত করে"
আহসানুল করিম
সাংবিধানিক বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী

আমাদের সংবিধানের ৩৬ অনুচ্ছেদে নাগরিকের চলাফেরার স্বাধীনতার নিশ্চিতের বিধান থাকলেও নিরাপদ, সু-রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং মোটরযান চলাচলের উপযোগী রাস্তার অধিকার সেভাবে স্বীকৃত নয়। ফলে সড়ক ব্যবস্থাপনা অব্যবস্থাপনার কারণে কেউ কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হলে ক্ষতিপূরণ আদায়ে সেভাবে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে না।
সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী দুর্ঘটনা তহবিল গঠন করা হলেও এই আইনও সেভাবে কার্যকর নয়। দেশে যে হারে সড়ক দুর্ঘটনার পরিমাণ বেড়ে চলছে, তা বেশ আশঙ্কাজনক ও উদ্বেগ জনক। কিন্তু এটি থেকে পরিত্রাণ পেতে সেভাবে কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।
অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে নিহতের পরিবার ও আহতরা বিচারিক আদালতে মামলা করছেন, কিন্তু মামলার বিচার এক পর্যায়ে আর সুফল বয়ে আনে না। অতীতে দেখা গেছে, এসব দুর্ঘটনা যেসব গাড়ি বা যাদের কারণে হচ্ছে তাদের পক্ষে ক্ষমতাসীন দলের কোনো বড় পরিবহন শ্রমিক নেতা বা পরিবহন মালিক নেতা দাঁড়িয়ে গেছেন। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।
আবার অনেক সময় ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট দায়ের করা হচ্ছে। কিন্তু নিরাপদ, সু-রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং মোটরযান চলাচলের উপযোগী রাস্তার অধিকার সেভাবে স্বীকৃত না হওয়ায় হাইকোর্টেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
সড়ক অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের বানিজ্যখাতও বেশ বাজেভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এর পরিত্রাণ খুবই জরুরি। দেশের ইমপোর্ট-এক্সপোর্ট খাত বিশেষভাবে ক্ষতির মুখে পড়ে যায়। যদি একটি শক্তিশালী আইনি কাঠামো দাঁড় না করিয়ে এভাবেই চলতে থাকে, তাহলে সড়কের অব্যবস্থাপনা কারণে মানুষের জীবন যেভাবে হুমকিতে পড়ছে বাণিজ্য খাতও সেভাবে হুমকিতে পড়বে।
সরকারের সদিচ্ছা থা্কলে ভারতের মতো বাংলাদেশে নিরাপদ, সু-রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং মোটরযান চলাচলের উপযোগী রাস্তার অধিকার সংবিধানে যোগ করতে পারে। এছাড়াও নতুন আইনও প্রণয়ন করা যেতে পারে। তবে শুধু সাংবিধানিক স্বীকৃতি বা নতুন আইন করলেই হবে না। সাথে যারা পরিবহনের চালক মালিক বা স্টাফ রয়েছে, তাদেরকেও যথাযথ কার্যকর সচেতন করার দায়িত্ব সরকারের।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি নিরাপদ, সু-রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য এবং মোটরযান চলাচলের উপযোগী রাস্তার অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি নিয়ে রায়ে যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে, বাংলাদেশেরও সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের অভিভাবক হিসেবে এরকম বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছু করতে পারে। কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন কোর্টের দ্বারস্থও হতে পারে এ বিষয় নিয়ে।
সুপ্রিম কোর্টকে সংবিধানের অভিভাবক বলার কারণ হলো এটি সংবিধানের সর্বোচ্চ ব্যাখ্যাদাতা, সংবিধানের কোনো বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো আইন বা কাজকে অবৈধ ঘোষণা করতে পারে এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করে। সংবিধানের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং সরকারের বিভিন্ন অঙ্গের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ করার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যে মামলার প্রেক্ষিতে রায়টি দিয়েছে, সেটি ছিল একটি ব্যক্তি উদ্যোগে সড়ক নির্মাণ উদ্যোগ নিয়ে। বাংলাদেশের সড়ক বা উড়ালসড়ক ব্যক্তি উদ্যোগে নির্মাণে সরকারে উদ্যোগ নিলে সড়ক ব্যবস্থাপনার মান উন্নত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উন্নত দেশের সিস্টেম রয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান একটি সড়ক, সেতু বা উড়াল সড়ক নির্মাণ করলো, সরকারের সাথে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চুক্তি করবে যে, ১০ থেকে ২০ বছর বা নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত ওই সড়ক, সেতু বা উড়াল সড়কের টোল ওই কোম্পানি বা ব্যক্তি পাবে। এতে করে নতুন সড়ক, সেতু বা উড়াল সড়কের ব্যবস্থাপনাও ভালো হবে।
"পণ্য পরিবহনের খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে"
আল মামুন
সভাপতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জগৎ বাজার ব্যবসায়ী সমিতি

আমাদের জগৎ বাজার পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের। প্রতিদিনই চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা থেকে ট্রাকে করে পণ্য আনতে হয়। ফলে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ব্যবহার করতে হয়।
কিন্তু এই মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার তন্তর বাস স্ট্যান্ড থেকে বেহাল অবস্থার শুরু। এ কারণে পণ্য পরিবহনে খরচ আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এখন।
চট্টগ্রাম থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া আগে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা ছিল। এখন মহাসড়কের বেহাল দশার কারণ দেখিয়ে ট্রাকের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে; এখন ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা ভাড়া গুণতে হয়।
প্রতিদিন গড়ে ১২ ট্রাকভর্তি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ঢুকে জগৎ বাজারে। তবে মহাসড়কের বেহাল অবস্থার কারণে পণ্য পৌঁছাতে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ঘণ্টা বেশি সময় লাগে।
এতে করে ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া পণ্যের মূল্যেও প্রভাব পড়ছে। তবে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিযোগীতাপূর্ণ বাজারে কেনা দামেই পণ্য বেচাকেনা করতে হয়। শুধুমাত্র ভাঙাচোরা সড়কের কারণে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
সাধারণত বড় ট্রাকগুলোর ধারণক্ষমতা ১৬ টন। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে ধারণক্ষমতা অনুযায়ী পণ্য পরিবহন করা যায় না। ভারী ট্রাকগুলো প্রায়ই বিকল হয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ফলে অনেক সময় ধারণক্ষমতার কম পণ্য পরিবহন করতে হয়। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোমল পানীয় ও মিনারেল পানি বাজারজাত করা হয়। বেহাল মহাসড়ক ব্যবহার করেই বিভিন্ন বাজারে এসব পণ্য সরবরাহ করতে হয়। ফলে পরিবহন ব্যয়ও বেড়েছে।
"মালিকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং যাত্রীরাও বেশি ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন"
মোহাম্মদ হানিফ
সাধারণ সম্পাদক, জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

আমাদের আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বেহাল কুমিল্লা-সিলেট ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংস্কারে নিয়ে অন্তত তিন দফা জেলা প্রশাসন ও সড়ক বিভাগে চিঠি দিয়েছি সংগঠন থেকে।
আমাদের সংগঠনের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেড্ডা থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়নপুর থেকে আশুগঞ্জ, ভাদুঘর থেকে মাধবপুর এবং পুনিয়াউট থেকে নবীনগর রুটে ১১০টির মতো লোকাল বাস চলাচল করে। এর মধ্যে নয়নপুর থেকে আশুগঞ্জ, মেড্ডা এবং ভাদুঘর থেকে মাধবপুর রুটে চলাচলকারী বাসের মালিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লা-সিলেট এবং ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন অংশ বেহাল হয়েছে। ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তৈরি হয়ে আছে। গর্তগুলোতে প্রায়ই বাস বিকল হয়ে পড়ে এবং যন্ত্রাংশ ভেঙে যায়।
তিনি বলেন, দুই মহাসড়কের বেহাল দশার কারণে বাসের রিয়ার এক্সেল, ফ্রন্ট এক্সেল ভেঙে যায়। এছাড়া ঘন ঘন টায়ার এবং টিউব বদলাতে হয়। এতে করে একেকটি বাসের এ সব যন্ত্রাংশ সংযোজন বাবদ প্রতি মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে।
আমরা বারবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না। এতে করে মালিক হিসেবে আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনি যাত্রীদেরও বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
মহাসড়কের জায়গায় জায়গায় বড় গর্ত, অনেক স্থানে পিচ উঠে গেছে। এতে করে বাসের স্বাভাবিক গতি ধরে রাখা যায় না। গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে বেশি। আর সময় বেশি লাগার কারণে ট্রিপও কমে গেছে। ফলে পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের আয়ও কমেছে।
"আমার দুর্ঘটনার জন্য রাস্তার খারাপ অবস্থা সম্পূর্ণভাবে দায়ী"
বাপ্পি খান
খুলনার মোহাম্মদনগরের বাসিন্দা ও সড়ক দুর্ঘটনার শিকার

গত বছর জুনে খুলনা সাতক্ষীরা মহাসড়ক দিয়ে, কয়রার বানিয়াখালি থেকে ফটোগ্রাফির কাজ করে ফিরছিলাম মোটরসাইকেলে। সঙ্গে এক সহকর্মী ছিলেন, মোটরসাইকেলের পেছনে। খুলনার দিকে আসছিলাম আমরা। হঠাৎ আমাদের সামনে একটা শিয়াল পড়ল, ওই সময় আমি ব্রেক করতে গিয়ে, সড়কের খাদে মোটরসাইকেলসহ পড়ে যাই। খুবই ভাঙাচোরা সড়ক।
এই দুর্ঘটনায় আমার বুকের আটটা কলারবোন সহ মোট ৯টা হাড় ভেঙ্গে যায়। তবে আমার সঙ্গী মোটামুঠি অক্ষত ছিলেন, হালকা একটু ব্যথা পাওয়া ছাড়া।
আমাকে টানা ২১ দিন হাসপাতালে থাকতে হয়েছে। এরপর ১ মাস ১১ দিন বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না, বিছানাতেই সবকিছু করতে হতো। পরে অবস্থা একটু ভালো হলেও, আরো আড়াই মাস আমাকে বেড রেস্টে থাকতে হয়েছে। চিকিৎসায় এ পর্যন্ত প্রায় লাখখানেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখনো আমি পরিপূর্ণ সুস্থ না। আমি চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছি, হাসপাতালে যেতে হয় এখনও।
এই দুর্ঘটনার জন্য সড়কের খারাপ অবস্থা দায়ী পুরোপুরি। ভালো রাস্তা হলে এরকম ব্রেক কষলে দুর্ঘটনার কিছু হতো না।