‘পিআরের ভাষা হচ্ছে মার্কার মধ্যে ভোট দেবে, কে এমপি হবে কেউ জানে না’: সালাহউদ্দিন আহমদ

প্রচলিত নির্বাচন পদ্ধতির পক্ষে অবস্থান এবং সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, 'গণতন্ত্রের ভাষা হচ্ছে মানুষ যাকে ভোট দিবে সেই এমপি নির্বাচিত হবে। পিআরের ভাষা হচ্ছে মার্কার মধ্যে ভোট দেবে, কে এমপি হবে কেউ জানে না।'
শনিবার (২৩ আগস্ট) বিকেলে চকরিয়া সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা বিএনপির দ্বিবার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
পিআর পদ্ধতির পক্ষে থাকা দলগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, 'কেউ কেউ এই পিআর পিআর বলে এখনো গলা ফাটাচ্ছে। উদ্দেশ্য কিন্তু পিআর না। উদ্দেশ্য হচ্ছে পিআর-পিআর করে যদি কিছু পায়।'
'যে-সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোরা পিআর-পিআর করে হয়রান-পেরেশান হয়ে যাচ্ছেন, আসেন আলাপ-আলোচনা করি। আপনাদের কী দাবি দেওয়া আছে, সে সমস্ত আমরা শুনব এবং আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব', যোগ করেন তিনি।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'দেশে নির্বাচনের মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। আগামী ডিসেম্বরে তফশিল ঘোষণা হবে। দেশ এখন নির্বাচন মুখী।'
শেখ হাসিনাকে 'ভারতের লোক' আখ্যা দিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'আওয়ামীলীগ ছিল একটা মাফিয়া শক্তি। আওয়ামীলীগ ছিল একটা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী। আওয়ামীলীগ ছিল একটি ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী। আওয়ামীলীগ কোনো রাজনৈতিক দলের নাম নয়। কখনো আওয়ামীলীগের রক্তে কোনো গণতন্ত্রের লেশ মাত্র ছিল না। আওয়ামীলীগের ডিএনএ-তেই গণতন্ত্র নেই।'
দীর্ঘদিন পর রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গত ১৭ বছর বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক পরিবেশ ছিল না। রাজনীতি বন্দি ছিল কারাগারে। রাজনীতি বন্দি ছিল লন্ডনে। রাজনীতি বন্দি ছিল শিলং-এ। এরকম উন্মুক্ত পরিবেশে রাজনীতি করার সুযোগ ছিল না।'
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'হাতপাখার সাথে যুক্ত হয়েছে আর একটি দল, যে দলটি সব সময় বাংলাদেশে বিভ্রান্তিকর রাজনীতি করেছে। এক সময় যে দলটি স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গেছে, আরেক সময় জনগনের বিরুদ্ধে গেছে। আরেক সময় মানুষের সেন্টিমেন্টের [আবেগ] বিরুদ্ধে গেছে। এবার তারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চায়।'
বাংলাদেশে একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালুর অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, রাজনীতিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, 'যে আমার বিরোধিতা করবে, আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিবে, তার সেই বক্তব্য দেয়ার অধিকারকে আমরা অবশ্যই সংরক্ষণ করব।' তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে এমন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হবে, কোনোদিন বাংলাদেশে ব্যক্তি স্বৈরতন্ত্রের প্রবর্তন হবে না। কোনো ফ্যাসিবাদের উত্থান হবে না।'
এদিকে, দীর্ঘদিন পর আয়োজিত এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১২ মার্চ উপজেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারের সম্মেলন উপলক্ষ্যে চকরিয়া সরকারি কলেজ ও এর আশপাশের সড়ক-উপসড়ক তোরণ, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে যায়।
উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা থেকে নেতাকর্মীরা বর্ণাঢ্য মিছিল নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। অর্ধলক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে এই সম্মেলন একটি বিশাল নির্বাচনী জনসভায় রূপ নেয়।