পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে জামায়াত-এনসিপির বৈঠক, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে জোর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ ইসহাক দার।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে পাকিস্তান হাইকমিশনে প্রথমে এনসিপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন।
বৈঠক শেষে ডা. তাহের সাংবাদিকদের বলেন, 'আমাদের সঙ্গে দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক এবং বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আঞ্চলিক জোট সার্ককে কীভাবে আরও সক্রিয় ও শক্তিশালী করা যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।'
তাহের আরও বলেন, 'গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি ছিল একপেশে। আমরা মনে করি, সবার সঙ্গেই সুসম্পর্ক থাকা দরকার। সেটার ব্যাপারে বৈঠকে দুই পক্ষের তরফেই জোর দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্ক বৃদ্ধির দিকে জোর দিয়ে আমরা বলেছি—আজকে সারা বিশ্বে যেসব সমস্যা হচ্ছে, বিশেষ করে ফিলিস্তিনের সমস্যা— এসব বিষয়ে যেন মুসলিম দেশগুলো ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেয়, সেই আলোচনাও আমরা করেছি।'
তিনি আরও জানান, বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে যেসব অমীমাংসিত ইস্যু রয়েছে, সেগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কিত আলোচনা প্রসঙ্গক্রমে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর পর এনসিপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন ইসহাক দার। বৈঠক শেষে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় পানিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সংকট ও যুদ্ধের ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে। নদীমাতৃক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা এবং পাকিস্তানের অতীত অভিজ্ঞতা বিনিময় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান গত ১৫-২০ বছর ধরে ফার্মাসিউটিক্যাল খাতে অগ্রগতির চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের ওষুধ খাতের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এ খাতে দুই দেশের মধ্যে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এতদিন তা বাস্তবায়ন হয়নি।
নাসীরুদ্দীন মনে করেন, পাকিস্তান যেহেতু পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র, তাই দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের প্রভাব রয়েছে। এ প্রভাব কাজে লাগিয়েই আঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে।
এছাড়া সাংস্কৃতিক বিনিময়, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম ও প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, পাকিস্তান নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের যে ধারণা, সেটা তাদের কাছে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এনসিপি মনে করে বিগত সময়ে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের মধ্যকার যে শত্রুভাবাপন্ন সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে জনগণের যে পারসেপশন, সেটাকে আমাদের সবচেয়ে সেনসিটিভ আকারে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমরা মনে করি বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে, যেকোনো ধরনের সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে '৭১ ইস্যুকে অবশ্যই ডিল করা উচিত। আমরা সে প্রসঙ্গ তাদের কাছে উত্থাপন করেছি।
'৭১-এর–অমীমাংসিত তিন ইস্যু সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায়। এ নিয়ে ইসহাক দার কিছু বলেছেন কি না, জানতে চাইলে আখতার হোসেন বলেন, বিষয়টি পাকিস্তান জানাবে। একই বিষয়ে সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, 'আমরা তাদের বলেছি, ৭১ বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা উচিত। তারা বলেছে, তারা এটাতে প্রস্তুত।'
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সে প্রেক্ষাপটেও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সার্ক বর্তমানে অকার্যকর অবস্থায় আছে ভারতের কারণে। কীভাবে সার্ককে আবার সক্রিয় করা যায় এবং আঞ্চলিক অর্থনীতিতে সমৃদ্ধি আনা সম্ভব–এ বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়।