জাকসু নির্বাচনে শিবির ও গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্যানেল ঘোষণা, সিদ্ধান্ত নেয়নি অন্যরা

৩৩ বছর পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রথম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো প্রস্তুতি জোরদার করতে শুরু করেছে, ঘোষণা করছে নিজ নিজ প্যানেল।
জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গতকাল (২১ আগস্ট) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে ২৫ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা স্টুডেন্ট ইউনিটি ফোরাম নামে তাদের প্যানেল প্রকাশ করলেও কোন পদে কোন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, তা এখনও নির্দিষ্ট করে জানায়নি। বাগছাসের সম্ভাব্য সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী হলেন সংগঠনটির আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল ও সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তৌহিদ মো. সিয়াম।
গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাত্রা শুরু করে, যার প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের অধিকাংশই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছেন।
অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলো মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এখনও প্যানেল ঘোষণা করেনি।
বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করতে পারেনি। বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোও প্যানেল ঘোষণা করেনি।
নির্বাচনি তফসিল অনুসারে, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৫ আগস্ট। মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিষয়ে ও বাতিলের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন গ্রহণ করা হবে ২৬ আগস্ট। ২৭ আগস্ট সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত শুনানি শেষে বিকেল ৪টায় আপিলের রায় ঘোষণা করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৮ আগস্ট বিকেল ৪টা পর্যন্ত। প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে ২৯ আগস্ট বিকেল ৪টায়।
জাকসু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ২৫টি পদের বিপরীতে ২৭৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন ২৯৯ জন শিক্ষার্থী।
শিবিরের প্যানেল
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট ব্যানারে প্যানেল ঘোষণা করে ইসলামী ছাত্রশিবির বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মুহিবুর রহমান বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা রাখা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন, এমন শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের প্যানেল ঘোষণা করা হয়েছে।
'আমাদের প্যানেলে জুলাই আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থী, ৬ জন নারী শিক্ষার্থী, শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধকতার শিকার এমন শিক্ষার্থীও রয়েছেন,' বলেন তিনি।
ছাত্রশিবিরের নেতৃত্বে গঠিত এ প্যানেলে ভিপি হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য আরিফুল্লাহ আদিব ও জিএস পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।
এছাড়াও এই প্যানেলে সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে (ছেলে) শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য ফিরদৌস আল হাসান, সহ-সাধারণ সম্পাদক (মেয়ে) পদে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
এছাড়া পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদে শাখা ছাত্রশিবিরের প্লানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক শাফায়েত মীর, ক্রীড়া সম্পাদক পদে শাখা ছাত্রশিবিরের সদস্য শফিউজ্জামান শাহীন, সহ-ক্রীড়া সম্পাদক শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক (ছেলে) মাহাদী হাসান, সাহিত্য ও ক্রীড়া সম্পাদক (মেয়ে) লুবনা, আইটি ও গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে শাখা ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম লিখন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।
জাকসুর নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন কমিশনের সদস্য সচিব ও প্রক্টর এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি আবাসিক হলে হল সংসদ নির্বাচনে সর্বমোট ৫১৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে ৪৬৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
গত মঙ্গলবার জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নির্বাচনের দিন ও পরদিন সেনা মোতায়েনের জন্য সেনাপ্রধান বরাবর চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়ে শিক্ষার্থী, প্রার্থী ও বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ছাত্রনেতারা বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে যদি সেনাবাহিনীর প্রয়োজন হয়, তবে তাদের সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের প্রস্তুতি নিতে হবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রস্তুতি নড়বড়ে বলে অভিযোগ করেন তারা।
সর্বশেষ জাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯২ সালে। ওই নির্বাচনে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করেনি বলে জানান শিক্ষকরা।
১৯৯২ সালের নির্বাচনে সিনেটর পদে নির্বাচন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামালউদ্দিন রুনু সাংবাদিকদের বলেন, 'ওই সময়ে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে প্রশ্নই আসে না। ওই সময় ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে পুলিশ কেন প্রবেশ করবে, সেটা নিয়েই তো প্রতিবাদ জানাত—সেখানে সেনাবাহিনীর তো সুযোগই ছিল না।'
জাকসু নির্বাচন কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার বলেন, সেনাবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্রে বা সবক্ষেত্রে মূলত আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। দেশে যেহেতু পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও দায়িত্ব পালন করছে, তাই নির্বাচনে সেনাবাহিনী ও পুলিশ স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে কাজ করবেন। তবে সেটিও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।