সিএমপি কমিশনারের গুলি চালানোর নির্দেশ ফাঁস: কনস্টেবল অমি দাস ৩ দিনের রিমান্ডে

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজের সরকারি ওয়াকিটকিতে দেওয়া গোপন নির্দেশনা ফাঁসের মামলায় পুলিশ কনস্টেবল অমি দাসকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের একটি আদালত।
আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) শুনানি শেষে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এস এম আলাউদ্দিন এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অমি দাসের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মেট্রোপলিটন সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. রাইহানুল ওয়াজেদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, 'পুলিশের রিমান্ড আবেদন পর্যালোচনার পর আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।'
রোববার রাতে চট্টগ্রামের খুলশী এলাকা থেকে অমি দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তিনি বেআইনিভাবে কমিশনারের সংবেদনশীল বার্তা রেকর্ড করে ফাঁস করেন, যা পুলিশ রেডিও ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্প্রচারিত হয়েছিল।
এই ফাঁসের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, কারণ ওয়াকিটকি যোগাযোগ সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ অভিযানিক নির্দেশনা ও জরুরি বার্তার জন্য সংরক্ষিত।
তদন্ত কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন, কীভাবে বার্তাটি রেকর্ড করা হয়েছিল, এতে আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, এবং এটি বাহিরের কারও কাছে পৌঁছেছিল কি না।
সিএমপি কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত ফাঁস হওয়া বার্তার নির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ না করলেও জানিয়েছেন, এটি বাহিনীর অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রটোকলের গুরুতর লঙ্ঘন।
কি ছিল নির্দেশনায়
গত ১২ আগস্ট সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ ওয়াকিটকির মাধ্যমে বাহিনীর সদস্যদের নির্দেশ দেন, তারা যেন অস্ত্র বহন করেন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী হামলাকারীদের বিরুদ্ধে গুলি চালাতে প্রস্তুত থাকেন।
তিনি বলেন, 'যদি কেউ অস্ত্র তোলে—তা বন্দুক হোক বা ধারালো ছুরি—তবে তাকেই গুলি করা হবে। এটা নিশ্চিত। দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারা অনুযায়ী আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আক্রমণের আগে প্রয়োজনে মাথা, বুক বা পিঠে গুলি চালানো যাবে। সরকার প্রদত্ত গুলি সর্বোচ্চ কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'পুলিশের কোনো টহলদল যেন অস্ত্র ব্যবহারে দ্বিধা না করে।'
কমিশনার আরও বলেন, 'আমার এসআই যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিল, সেখানে অন্তত একজন হামলাকারীকে না মেরে কেউ ফিরে আসবে—এটা কেউ ভাববে না।'
তিনি বলেন, '৫ আগস্টের পর পুলিশের অনেক কার্যক্রমে পরিবর্তন এসেছে। মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে কিছু কর্মকর্তা ধারণা পোষণ করতে শুরু করেছেন যে, তারা আক্রান্ত হলেও অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবেন না।'
১১ আগস্টের ঘটনার প্রসঙ্গে কমিশনার বলেন, 'আমার কর্মকর্তাকে তারা শিরচ্ছেদও করতে পারত। আল্লাহ তাকে রক্ষা করেছেন। আমি তাদের মনে করিয়ে দিয়েছি যে, বর্তমান আইনে আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। আমার বাহিনী নিজেদের এবং সরকারি সম্পদের নিরাপত্তায় দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৬ ধারা অনুযায়ী যা করণীয়, তাই করবে। কেউ চুপচাপ বসে থেকে হামলার শিকার হবে না।'