জামিন নামঞ্জুর, রিমান্ড শেষে কারাগারে সাবেক এমপি মুক্তি

রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মামলায় নড়াইল-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি এবং আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি মোজাম্মল হককে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বুধবার (১ অক্টোবর) শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
ছয় দিনের রিমান্ড শেষে পুলিশ আসামিদের আদালতে হাজির করে। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই আব্দুস সালাম তাদের কারাগারে রাখার আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহাঙ্গীর আলম ও সোহেল জামিন চেয়ে শুনানিতে বলেন, 'আসামি ৪ বার এমপি হওয়ার পর সম্পদ কমেছে, বাড়ে নাই। তিনি একজন জনপ্রিয় এমপি। তিনি স্বতন্ত্রভাবেও এমপি নির্বাচিত হন। নড়াইলে কোনো ছাত্র জনতার আন্দোলন হয় নাই। কোনো হত্যা হয় নাই। ওই এলাকার কোনো হত্যা মামলায় তিনি আসামি নন। তাকে জামিন দিন। তাকে রিমান্ডে নিয়ে নাকি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। কি পাওয়া গেছে? কিছুই পাওয়া যায়নি। আসামির জামিনের প্রার্থনা করছি।'
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর কাইয়ুম হোসেন নয়ন জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২ হাজার ছাত্র জনতা হত্যা করে শেখ হাসিনা পালিয়ে যায়। তার রাজনৈতিক ইতিহাস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখবেন, তিনি সহিংসতায় জড়িত ছিলেন। শর্ট গান নিয়ে ছাত্র জনতাকে গুলি করার মতো ভিডিও আমরা দেখেছি। আপনি ইউটিউবে সার্চ দেন। দেখেন তার কি সহিংস রাজনৈতিক কার্যকলাপ রয়েছে। ১৭ বছর কী ধরনের নির্বাচন হয়েছে আপনারা দেখেছেন। আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে সে ডামি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।'
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে বিকেল চারটার দিকে আসামিদের হাতে হ্যান্ডকাপ, মাথায় হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরিয়ে কাঠগড়ায় আনা হয়। আদালতে প্রবেশ ও প্রস্থানকালে মুক্তি ও মোজাম্মেলের পক্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা 'জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান দেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে রাজধানীর নিকেতন এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। পরদিন আদালত তাদের ছয় দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে গুলশানের ডা. ফজলে রাব্বী পার্কের পাশে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ব্যানার হাতে নিয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার পাশাপাশি তাদের কার্যক্রমকে গতিশীল করতে উসকানিমূলক স্লোগান দেয় এবং রাস্তায় চলাচলরত গাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা করে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে পালানোর চেষ্টা করলে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
মোবাইলগুলো পর্যালোচনা করে পুলিশ দেখতে পায়, আসামিরা মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করা এবং রাষ্ট্রের অবকাঠামো ধ্বংসের লক্ষ্যে নিজেদের সংগঠিত করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছিল। এ ঘটনায় গুলশান থানার এসআই মাহাবুব হোসাইন ওইদিনই সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা দায়ের করেন।