আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নির্বাচন আয়োজনে ৪ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা প্যাকেজ দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে চার মিলিয়ন ইউরোর সহায়তা প্যাকেজ দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
আজ মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেয়, যা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে।
বৈঠক শেষে মাইকেল মিলার বলেন, 'বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্বে আমরা এমন এক পরিবর্তনের সহায়তায় কাজ করছি, যা গণতান্ত্রিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাবে। আপনারা নিশ্চয়ই শুনেছেন, দেশ ২০২৬ সালের শুরুর দিকে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। আজ আমি নির্বাচন কমিশনকে জানাতে এসেছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চার মিলিয়ন ইউরোর বেশি সহায়তা দেবে, যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন আয়োজন করতে পারে।'
তিনি বৈঠককে অত্যন্ত ফলপ্রসূ উল্লেখ করে বলেন, 'আগামীতে এ বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলবে।'
মিলার আরও বলেন, 'আজ আমার সঙ্গে শুধু ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলই ছিল না, ইউরোপীয় পার্টনারশিপ ফর ডেমোক্রেসির প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তারা আমাদের বাস্তবায়নকারী সহযোগী। তারা নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ, যারা নিশ্চিত করবেন আসন্ন নির্বাচনে নাগরিক পর্যবেক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।'
মাইকেল মিলার বলেছেন, 'অবশ্যই এখানে ভোটারদের শিক্ষার বিষয় রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হিসেবে আমরা বাংলাদেশের অংশীদার এবং নির্বাচন কমিশনকে ক্ষমতায়ন করতে বদ্ধপরিকর, যখন তারা নির্বাচন আয়োজন করবে। আমি এটাও উল্লেখ করতে চাই যে, আমরা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনকে সরাসরি সহায়তা করব সক্ষমতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এবং বিশেষজ্ঞ মতামত দিয়ে। এর মধ্যে রয়েছে কার্যক্রম পরিকল্পনা ও বিরোধ নিষ্পত্তির মতো বিষয়। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে যেমন, তেমনি বাংলাদেশের অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা।'
তিনি আরও বলেন, 'ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সম্ভাব্য একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের জন্য অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখেছে। এ বিষয়ে আমরা আগামী মাসগুলোতে অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাব। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আজকের বৈঠক ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ। তারা অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, এবং আমি এ সহযোগিতায় খুবই সন্তুষ্ট।'
নির্বাচন পরিবেশ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, 'নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা আমাদের বিষয় নয়। এটি ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। তবে এখন আমাদের আলোচনার মূল বিষয় হলো, আসন্ন কয়েক সপ্তাহ ও মাসে কী কী বাস্তব পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন যাতে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিশ্চিত হয়। এ কারণেই আমরা এখন আমাদের বিশেষজ্ঞদের কাজে লাগাচ্ছি। আমরা চাই বাংলাদেশে নির্বাচন হোক বিশ্বাসযোগ্য, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন এবং অবশ্যই অবাধ ও সুষ্ঠু।'
আরেক প্রশ্নের উত্তরে মাইকেল মিলার বলেন, 'আগামী মাসে একটি প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ দল বাংলাদেশে আসবে। তবে এটি কোনো পর্যবেক্ষণ মিশন নয়। বিশেষজ্ঞ দলের কাজ হবে পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর জন্য পরিবেশ উপযুক্ত কি না তা মূল্যায়ন করা। আমরা দেখব এর বাস্তবতা ও যৌক্তিকতা আছে কি না। তবে রাজনৈতিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে বাংলাদেশ অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে, বিশেষ করে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর ক্ষেত্রে।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ বর্তমানে গভীর রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাই অনেক বিষয় সমাধান করা জরুরি। আপনাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আছে গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনের। তবে সাম্প্রতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ও ফলাফল নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। এখন আমাদের দেখতে হবে ভোটাররা, বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা—যারা হয়তো আগে কখনো ভোট দেয়নি—তাদের যথেষ্ট শিক্ষা রয়েছে কি না যাতে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারে।'
তিনি আরও বলেন, 'একই সঙ্গে প্রশাসনের সক্ষমতা থাকা দরকার ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তি মোকাবিলায়। এটি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, সারা বিশ্বেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এসব ক্ষেত্রে আমরা কাজ করব। আমরা এখন খুঁজছি কীভাবে সবচেয়ে কার্যকরভাবে সাহায্য করতে পারি। তবে আজকের বৈঠক ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ এবং আমি আশাবাদী যে আমরা সব ক্ষেত্রে আপনাদের সহযোগিতা করতে পারব।'
নতুন একটি ইইউ অর্থায়িত প্রকল্প প্রসঙ্গে মাইকেল মিলার বলেন, 'আমাদের একাধিক উদ্যোগ রয়েছে। আমরা ভোটারদের শিক্ষায় কাজ করব। আমরা নিশ্চিত করব যাতে স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলো মাঠপর্যায়ে কাজ করার সক্ষমতা পায়। আমরা বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কাজ করব। একই সঙ্গে আমরা ছোট ছোট সিভিল সোসাইটি সংগঠনের সঙ্গেও কাজ করব, যারা ডিজিটাল অধিকার এবং ভুয়া তথ্য মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞ।'