জানিপপসহ ৩ নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থার ২০১৩–২৪ সালের আর্থিক তথ্য চায় নির্বাচন তদন্ত কমিশন

২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালনকারী তিন সংস্থা—জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ), সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এবং ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম—এর ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে জাতীয় নির্বাচন তদন্ত কমিশন।
কমিশনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে চিঠি দিয়ে ২০১৩ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ের এ তিন সংস্থার ব্যাংক হিসাব বিবরণী পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
প্রথম চিঠিটি পাঠানো হয় গত ১৭ সেপ্টেম্বর। এর পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কেবল সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তদন্ত কমিশনে পাঠিয়েছে। তবে বাকি দুই সংস্থার তথ্য না পাওয়ায় তদন্ত কমিশন ৬ অক্টোবর পুনরায় চিঠি দিয়ে ১২ অক্টোবরের মধ্যে জানিপপ ও ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাঠানোর অনুরোধ করেছে।
গত ২৬ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪) নিয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে পাঁচ সদস্যের নির্বাচন তদন্ত কমিশন গঠন করে। এই কমিশনের প্রধান হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইন।
কমিশনকে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কমিশন দেশি–বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক, তদারকি সংস্থা ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত অভিযোগ বিশ্লেষণ করবে।
দুর্নীতির মামলায় কারাগারে জানিপপের চেয়ারম্যান
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা এক মামলায় গত ৭ আগস্ট গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যও ছিলেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে জানিপপ। সংস্থাটি প্রতিবারই নির্বাচনের পর একে 'অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক' বলে মন্তব্য করে আলোচনায় আসে।
এছাড়া সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন এবং ইলেকশন মনিটরিং ফোরামও ওই তিনটি নির্বাচনে পর্যবেক্ষক হিসেবে ভূমিকা রাখে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়েও বিতর্ক সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে এই দুটি সংস্থা বিদেশি নাগরিকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে নিয়ে এসে আলোচনার জন্ম দেয়। তাদের আনা ব্যক্তিদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বিষয়ে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।
এই দুই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন মোহাম্মদ আবেদ আলী, যিনি নিজেকে সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব ও ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান হিসেবে পরিচয় দিতেন।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার তার লেখা বই 'নির্বাচননামা: নির্বাচন কমিশনে আমার দিনগুলো'-তে এই দুই সংস্থাকে 'ভুঁইফোড় সংগঠন' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।