ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা, সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রগতি কতদূর?

গত ৯ আগস্ট রাতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলে 'প্রকাশ্য' ও 'গোপন'—দুই ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা এসেছিল। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর প্রভোস্ট ও ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কিন্তু ঘোষিত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কতদূর অগ্রগতি হয়েছে, তা নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান জানাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, দুটি বৈঠক থেকেই কিছু সুপারিশ এসেছে। তবে সিদ্ধান্তে আসার জন্য আরও আলোচনার প্রয়োজন।
প্রশাসন থেকে দ্রুত গাইডলাইন চেয়েছে হলের প্রভোস্টরা
আবাসিক হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবির বিষয়ে আলোচনা করতে গত শনিবার প্রায় ৫ ঘণ্টা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৮টি হলের প্রভোস্টদের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠক থেকে কোনো সিদ্ধান্ত না পৌঁছালেও এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আবাসিক হলে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা চান প্রভোস্ট।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলের প্রভোস্ট বলেন, 'এখন আবাসিক হলগুলোতে সিট বণ্টনসহ সব কিছু প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আছে। আমরা বৈঠকে মোটামুটি সব হলের প্রভোস্টই প্রশাসনকে বলেছি, আমরা চাই না হলগুলোতে পুরানো রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরে আসুক। আমাদের শিক্ষার্থীরাও চায় না, আমরা হল প্রশাসনও চাই না।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি হলের প্রভোস্ট এ প্রতিবেদককে বলেন, 'ছাত্ররাজনীতি থাকবে কি থাকবে না এ বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি আপনারা কেন্দ্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেন।'
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক শাহ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, '২০২৪ সালের ১৭ জুলাই প্রত্যেকটা হলে তৎকালীন প্রশাসনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের যে সমঝোতা হয়েছে এটাকে আপহোল্ড করে কিভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে বিষয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মত রয়েছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় সেই নীতিমালা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চেয়েছি। '
তিনি আরও বলেন, ''বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নীতিমালা আসলে সেভাবেই বাস্তবায়ন করব যেন ঐ সময়ের 'সমঝোতা' এবং বর্তমান প্রেক্ষাপট দুটোকেই অ্যাড্রেস (উল্লেখ) করতে সুবিধা হয়।''
সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কোনো বাধা আছে কী?
এ বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক মো. ফারুক শাহ বলেন, 'আইনগতভাবে দেখলে একে দুটো দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। হলের শিক্ষার্থীদের দেখাশোনা করে হল প্রশাসন। শিক্ষার্থী এবং হল প্রশাসন যদি একমত পোষণ করে এই নিয়মে আমরা হলকে পরিচালনা করতে চাই, তাহলে হলের প্রেক্ষাপটে এতে সমস্যা নেই।'
তিনি বলেন, 'আবার রাজনীতি করার অধিকার আইনগতভাবে সবার আছে। প্রচলিত আইনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। কিন্তু হল পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি থাকবে না এ বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষক উভয় মিলে যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে সেটা বাস্তবায়ন করার নৈতিক অধিকার আছে।'
রূপরেখা দিতে বলেছে ছাত্রসংগঠনগুলো
গত রোববার আবাসিক হলেগুলোতে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ক্যাম্পাসের প্রায় ২৩ ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় ক্যাম্পাস ও হল রাজনীতি এবং ডাকসু নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়, তবে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। বৈঠকে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ একাডেমিক ও হল এলাকায় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি জানায়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কি না এ নিয়ে প্রশ্ন তোলে কোনো কোনো ছাত্রসংগঠন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ ছাত্রসংগঠনই প্রস্তাব দেয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেন সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি রূপরেখা তৈরি করে, যেন হলগুলোতে গেস্টরুম, গণরুম ও অপরাজনীতির সংস্কৃতি বন্ধের ব্যবস্থা থাকে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত নিতে আরও আলাচনা করবে প্রশাসন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সাইমা হক বিদিশা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'দুটো আলোচনা থেকেই বেশ কিছু পরামর্শ এসেছে, ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আমরা আবারও বসব। এছাড়া সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকেও মতামত নেওয়ার বিষয়টি এসেছে। এছাড়া পূর্বে 'রাজনীতির প্রকৃতি ও ধরন বিষয়ক কমিটি আমরা করেছিলাম তাদেরকে বলা হয়েছে যেন তারা দ্রুত কিছু সুপারিশ দিতে পারে।'
তিনি বলেন, 'এ কাজটা খুব দীর্ঘায়িত হবে না, খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই হলে ছাত্ররাজনীতি থাকা না থাকার বিষয়ে কিছু নির্দেশনা দিব।'
তিনি আরও বলেন, 'আলোচনা শেষ হলেই আমরা সবকিছু গুছিয়ে লিখিত আকারে প্রকাশ করব।'