আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে ইসরায়েলকে নিষিদ্ধের আহ্বান স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর

গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের কারণে দেশটিকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা থেকে নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। খবর বিবিসি'র।
সানচেজ তার সোশ্যালিস্ট ওয়ার্কার্স পার্টির নির্বাচিত প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, 'ইসরায়েল কোনো আন্তর্জাতিক মঞ্চকে নিজের ভাবমূর্তি আড়াল করার কাজে ব্যবহার করতে পারে না।'
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালে ইউক্রেন আক্রমণের পর রাশিয়ার সঙ্গে যেমন আচরণ করা হয়েছিল, ইসরায়েলকে তেমন আচরণের মুখোমুখি করা উচিত।
রোববার ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার স্পেনের প্রধানমন্ত্রীকে 'কলঙ্ক' আখ্যা দিয়ে অভিযোগ করেন, তিনি মাদ্রিদে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকে উসকে দিয়েছেন। সেই বিক্ষোভের কারণেই বাতিল হয় 'ভুয়েলতা আ এসপানিয়া' সাইক্লিং প্রতিযোগিতার শেষ ধাপ। সেখানে একটি ইসরায়েলি দল অংশ নিয়েছিল।
এর আগে সানচেজ বলেন, তিন সপ্তাহব্যাপী এই প্রতিযোগিতায় পূর্ববর্তী বিক্ষোভগুলো প্রমাণ করেছে—গাজা ইস্যুতে স্পেন 'গর্বের সঙ্গে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত' স্থাপন করেছে।
সরকারের কয়েকজন মন্ত্রীও প্রতিযোগিতার শেষ ধাপের বিক্ষোভের প্রশংসা করেন। সরকারি হিসাবে, ওই বিক্ষোভে প্রায় এক লাখ মানুষ অংশ নেন।
দেশটির ডিজিটাল রূপান্তর মন্ত্রী অস্কার লোপেজ বলেন, 'এটা আমার কাছে স্বস্তির যে হাজার হাজার মানুষ সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে। কারণ এটা গণহত্যা, এর অন্য কোনো নাম নেই।'
অন্যদিকে ইসরায়েল বারবার অস্বীকার করেছে, গাজায় তাদের কর্মকাণ্ড গণহত্যা। দেশটির দাবি, এসব পদক্ষেপ আত্মরক্ষার জন্য ন্যায্য।

স্পেনের সংস্কৃতিমন্ত্রী আর্নেস্ত উর্তাসুন বলেছেন, ইসরায়েলকে আগামী ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেওয়া উচিত নয়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজও একই দাবি করেছিলেন।
উর্তাসুন বলেন, 'আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, ইসরায়েল যাতে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে না পারে।'
ইতোমধ্যেই আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের সরকারি সম্প্রচার মাধ্যম জানিয়েছে, ইসরায়েলকে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। কারণ, গাজায় ভয়াবহ প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয় ঘটছে।
স্পেন ও ইসরায়েলের সম্পর্ক ২০২৩ সালের শেষ থেকে দুর্বল হয়ে ওঠে। সানচেজ তখন গাজার বেসামরিক মৃত্যুর বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং তার সরকারে কেউ কেউ কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান।
২০২৪ সালে স্পেন, নরওয়ে ও আয়ারল্যান্ড মিলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। সম্প্রতি সানচেজ ইসরায়েলকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধও রয়েছে।
এ নিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ সানচেজ সরকারের বিরুদ্ধে 'ইহুদিবিদ্বেষী মনোভাব' ও 'বিদ্বেষমূলক ভাষা' ব্যবহারের অভিযোগ তোলেন।
স্পেনের এলকানো রয়্যাল ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, অন্তত ৮২ শতাংশ স্প্যানিশ নাগরিক মনে করেন গাজায় গণহত্যা চলছে।
সানচেজের ঘোষণার দুই দিন পর ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক সহায়তা স্থগিতের আহ্বান জানান। তিনি গাজায় চলমান 'মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ'-এর কথাও উল্লেখ করেন।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ইউরোপ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের যথাযথ জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
অন্যদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, গাজায় দুর্ভিক্ষ নেই। যেখানে ক্ষুধা আছে, তার দায় জাতিসংঘসহ বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা ও হামাসের।
ইসরায়েল অভিযোগ করেছে, গাজার সীমান্তে শত শত ট্রাক অপেক্ষা করলেও জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলো সেই সাহায্য নিচ্ছে না।
তবে জাতিসংঘ-সমর্থিত খাদ্য পর্যবেক্ষক সংস্থা আইপিসি গত আগস্টে নিশ্চিত করেছে, গাজার কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ চলছে। খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দেওয়ায় ইসরায়েলকে এ দুর্ভিক্ষের জন্য দায়ী করা হচ্ছে।
ইসরায়েল সব সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করে এবং দখলদার শক্তি হিসেবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বেসামরিক জীবন রক্ষার দায়িত্ব তার। এর মধ্যে অনাহার প্রতিরোধও অন্তর্ভুক্ত।