প্রতীক নয়, ব্যক্তিকে ভোট দিত মানুষ: হাফিজ উদ্দিন

প্রতীক নয়, মানুষ ব্যক্তিকে ভোট দিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিরোধিতা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, 'বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতীক নয়, ব্যক্তিকে ভোট দিতে অভ্যস্ত।'
শুক্রবার (৮ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে 'দ্রুত বিচার সম্পন্ন, মৌলিক সংস্কার ও সংসদ নির্বাচন'- শীর্ষক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ কথা বলেন।
'অগ্নি সোশাল ফাউন্ডেশন' ও 'আমাদের নতুন বাংলাদেশ'-এর যৌথ উদ্যোগে এই আলোচনা সভা আয়োজন করে।
এসময় তিনি বলেন, 'ভোটাররা এমন একজনকে নির্বাচিত করতে চায় যার উপর তারা বিশ্বাস করতে পারে... এমন একজন যিনি তাদের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়াবেন। এমনি প্রেক্ষাপটে প্রতীক-কেন্দ্রিক পিআর নির্বাচন নিয়ে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক।'
নির্বাচন কমিশনের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, তাদের দল বর্তমান সরকার এবং কমিশনের অধীনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রস্তুত।
আসন্ন নির্বাচন হাসিনা আমলের 'দুঃশাসন'র অবসান ঘটাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন হাফিজ।
তিনি আরও বলেন, 'একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের একটি উদাহরণ স্থাপন করা উচিত।'
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে হাফিজ নির্বাচন বিলম্বিত করতে দলটির বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে তারা বিএনপির মিত্র ছিল। এখন নির্বাচনের আগে, তারা যে বিষয়গুলো উত্থাপন করছে— তা আশ্চর্যজনক।'
তিনি আরও বলেন, 'জামায়াত দাবি করেছে যে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার উপর জোর দেওয়া হয়নি। যারা ইতিহাস মনে রাখে—তারা জানে যে এই একই জামায়াত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল। পরে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।'
হাফিজ অভিযোগ করেন, বেশ কয়েকটি দল ইতোমধ্যেই ধরে নিয়েছে যে, তারা জাতীয় নির্বাচনে তাদের জামানত হারাবে, যে কারণে তারা পিআর ব্যবস্থাকে সমর্থন করছে।
তিনি বলেন, 'সাংবিধানিক সংস্কার সম্পর্কে হাফিজউদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকারের সংবিধান সংশোধন করার কোনো ম্যান্ডেট নেই, যদিও তারা একটি রূপরেখা দিতে পারে। 'সংস্কারগুলো একটি নির্বাচিত সরকারকে করতে হবে।'
নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপি যেকোনো নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেবে উল্লেখ করে হাফিজ বলেন, 'যদি কেউ বিশ্বাসযোগ্য ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে, আমরা তা মেনে নেব। তবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।'
তবে তিনি অভিযোগ করেন, কিছু মহল এখনও নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছে।
দেশের কল্যাণে কাজ করার প্রচেষ্টার জন্য প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করে তিনি বলেন, উপদেষ্টার অনেক সহযোগী ক্ষমতার লোভে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন।
হাফিজ দাবি করেন, 'তারা নির্বাচনের পথে হাঁটার পরিবর্তে একচেটিয়া কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়।'
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে 'অনেক গণ্ডগোল'-হবে বলে আশঙ্কাপ্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'নির্বাচনের আগে কিন্তু দেশে অনেক গণ্ডগোল হবে। ভারতে আশ্রয় নিয়ে মাফিয়ানেত্রী শেখ হাসিনা এই দেশকে লণ্ডভণ্ড করার জন্যে, নির্বাচনকে বানচাল করার জন্যে অনেক সহিংস ঘটনার অবতারণা করবেন।'
এসময় হাফিজ বলেন, 'আমাদের সবাইকে সর্তক থাকতে হবে। দলমত নির্বিশেষে আমরা দেশবাসী সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এই মাফিয়াদের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'এবারের নির্বাচন হবে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্যে, এবারের নির্বাচন হবে অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করার জন্য, এবারের নির্বাচন হবে এই হাসিনা মার্কা-আওয়ামী লীগ মার্কা দুঃশাসনকে চিরতরে নির্বাসনে দেবার জন্যে।
হাফিজ বলেন, 'এদেশের পুলিশ বাহিনী একটি পেটুয়া বাহিনীতে পরিণত হয়েছিল, বাংলাদেশ একটি পুলিশ স্টেটে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু একবছর অতিক্রান্ত হলেও এখনও পুলিশ বাহিনীতে কোনো সংস্কার হয়নি। এই বাহিনী সঠিকভাবে আসন্ন নির্বাচন করতে পারবে কি না এ নিয়ে জনগণের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে।'
তিনি বলেন, 'ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন যে র্যাবকে নির্বাচনের দায়িত্বে রাখা হবে। কিন্তু এই বাহিনীকে এখনও রাখা হলো কেন? বিএনপি থেকে পুলিশ সংস্কার কমিটি করা হয়েছিল, আমি সেই কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। আমরা সুপারিশ করেছিলাম এই র্যাবকে বিলুপ্ত করে দেবার জন্যে।'
তিনি আরও বলেন, 'এত কলঙ্ক তারা লেপন করেছে, এত অত্যাচার-নির্যাতন করেছে; এই বাহিনী সম্পর্কে উপযুক্ত কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেই ধরনের কোনো ব্যবস্থা আমরা দেখতে পারছি না।'