৪০ বছরের পুরোনো মামলা: সোনালী ব্যাংককে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আদেশ বহাল

৪০ বছর আগে দায়ের করা একটি মিথ্যা মামলায় সাবেক এক কর্মকর্তাকে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে সোনালী ব্যাংককে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
আজ (২৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের একটি বেঞ্চ সোনালী ব্যাংকের করা রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করেন বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ ওই মামলায় অভিযুক্ত প্রবীণ ব্যক্তি হরেন্দ্রনাথ চন্দ্রকে হয়রানি ও মামলা পরিচালনার খরচ বাবদ ক্ষতিপূরণ হিসেবে সোনালী ব্যাংককে ২০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেয়। সেই অর্থ তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়।
ওইদিন বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে হরেন্দ্রনাথের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ওমর ফারুক।
মামলার নথি অনুযায়ী, কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার হেলালপুর গ্রামের বাসিন্দা হরেন্দ্রনাথ চন্দ্র দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে আদালতে এই মামলার লড়াই চালিয়ে গেছেন।
চার দশক আগে হরেন্দ্রনাথসহ নয়জনের বিরুদ্ধে সোনালী ব্যাংকের ১৬ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। তারা খালাস পেলেও সোনালী ব্যাংক আপিল করায় মামলার দীর্ঘসূত্রতা ঘটে।
স্নাতক পাস করার পর ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর ঢাকায় সোনালী ব্যাংকে ক্যাশিয়ার কাম ক্লার্ক হিসেবে যোগ দেন হরেন্দ্রনাথ। তিন বছরের মাথায় পদোন্নতি পেয়ে সিনিয়র ক্যাশিয়ার কাম ক্লার্ক হন এবং পরে যাত্রাবাড়ী শাখায় বদলি হন।
১৯৮৫ সালে ওই শাখা থেকে ব্যাংকের স্থানীয় অফিসে ১৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা প্রেরণ করা হয়, যার রসিদও লিখিতভাবে নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু পরবর্তী এক অভ্যন্তরীণ তদন্তে দাবি করা হয় যে অর্থটি গায়েব হয়ে গেছে।
তৎকালীন তদন্তের ভিত্তিতে ওই বছর হরেন্দ্রনাথসহ নয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৬ সালের মার্চে তাদের বরখাস্ত করা হয়।
এর আগে, ১৯৮৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি পৃথক মামলায় গ্রাহকের টাকা জমা না দেওয়ার অভিযোগে ঢাকার একটি আদালত হরেন্দ্রনাথকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়। এ মামলায় আরও কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তিনি ১৯৯০ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পান।
এরও আগে, ১৯৮৫ সালের জুলাইয়ে দুর্নীতি দমন ব্যুরো (তৎকালীন) হরেন্দ্রনাথসহ নয়জনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ঢাকার বিশেষ আদালতে একটি ফৌজদারি মামলা করে। তবে ১৯৮৬ সালের নভেম্বরে ওই মামলায় হরেন্দ্রনাথসহ সব আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।
তবে মামলায় হেরে যাওয়ার পর সোনালী ব্যাংক ১৯৮৮ সালে মানি লোন কোর্টে হরেন্দ্রনাথদের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করে। একতরফা রায়ে আদালত তাদের দোষী সাব্যস্ত করে সম্পূর্ণ অর্থ ফেরতের নির্দেশ দেয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন হরেন্দ্রনাথ। ১৯৯২ সালের আগস্টে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালত ওই আপিল গ্রহণ করে ট্রায়াল কোর্টের রায় বাতিল করে।
পরে সোনালী ব্যাংক ২০১৯ সালে ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে। ২০২২ সালের আগস্টে হাইকোর্ট সেই আপিল খারিজ করে দেয়। এর বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লিভ টু আপিল করে ব্যাংক, যা আজ আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়।