সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক আটক
সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে তাকে আটক করা হয়।
খায়রুল হকের আটকের খবর নিশ্চিত করে গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাকে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে রায় প্রদান এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঁইয়া এ মামলা করেন।
এছাড়া, দুর্নীতি, বিদ্বেষমূলক এবং বেআইনিভাবে রায় দেওয়া সহ অসত্য ও জালিয়াতিমূলক রায় দেওয়ার অভিযোগে খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ২৭ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগ থানায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন মামলা দায়ের করেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল মামলার রায় প্রদানকারী হিসেবে খায়রুল হক রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক সমালোচিত হন। আপিল বিভাগে থাকাকালে তিনি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় দেন, যার মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়।
এবিএম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর থেকে ২০১১ সালের ১৭ মে পর্যন্ত দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই তাকে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ঐ মেয়াদ শেষে কয়েক দফা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তাকে পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়।
পরবর্তীতে, গত বছরের ১৩ আগস্ট আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করেন। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম মেয়াদে ১৯৯৮ সালে খায়রুল হককে হাইকোর্ট ডিভিশনের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়; ২০০০ সালের এপ্রিলে একই ডিভিশনের স্থায়ী বিচারক হিসেবে তার নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের জুলাইয়ে খায়রুল হককে আপিল বিভাগে উন্নীত করা হয়।
২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে হাসিনা সরকার দুইজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতি—বিচারপতি এম এ মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমানকে ডিঙিয়ে খায়রুল হককে বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়।
পরের বছরের মে মাসের মধ্যেই তিনি অবসরের বয়সে পৌঁছে যান। দেশের গণতন্ত্র রক্ষার্থে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখতে ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের মতো বিশিষ্ট আইবিদদের জোরালো আবেদন উপেক্ষা করে অবসরের এক সপ্তাহ আগে বিচারপতি খায়রুল হক এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে 'অসাংবিধানিক' ঘোষণা করে রায় দেন।
বিচারপতি খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিনজন বিচারপতি এই ব্যবস্থাকে 'অসাংবিধানিক' ঘোষণার সঙ্গে একমত হননি এবং ভিন্নমতসূচক রায় দেন। তবে অপর তিন বিচারপতি তার সঙ্গে একমত হওয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন বিচারপতি খায়রুল হকই ফল নির্ধারক ভোটটি দেন। এর ফলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা 'অসাংবিধানিক' হিসেবে ঘোষিত হয়।