মাইলস্টোনে বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও ৪ শিশুর মৃত্যু, মোট নিহত অন্তত ৩১

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও চার শিশু মারা গেছে। এ নিয়ে দুর্ঘটনায় মোট নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১ জনে। এদের বেশিরভাগই শিশু। নতুন করে আরও চারজন আহত মারা গেছেন।
এর আগে, আজ ২২ জুলাই ভোরে রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে (এনআইবিপিএস) আগুনে দগ্ধ পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এনআইবিপিএস-এর জরুরি বিভাগের রেসিডেন্ট সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান সকালে এ তথ্য দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন।
এরপর দুপুর ১টা ৫৯ মিনিটে আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ফেসবুকে জানায়, আরও চারজন আহত মারা গেছেন।
আইএসপিআরের পোস্টে নতুন করে নিহতদের পরিচয় জানানো হয়নি। তবে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এখন পর্যন্ত এনআইবিপিএসে ১০ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৬ জন, উত্তরার লুবানা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে ২ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল ও ইউনাইটেড হাসপাতালে ১ জন করে মারা গেছেন।
সকালে মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে রয়েছে—নাজিয়া, যার শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল; আরিসন (১৩), শরীরের ১০০ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে গতরাত ২টা ২০ মিনিটে মারা যায়; আরিয়ান (১৩), ৮৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে রাত আড়াইটায় মারা যায়; শায়ান ইউসুফ (১৪), ৯৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় মারা গেছে; এবং ৯ বছর বয়সী বাপ্পি শরীরে ৩৫ শতাংশ দগ্ধ নিয়ে আজ ভোর ৫টার দিকে মারা যায়।
এর আগে গতকাল (২১ জুলাই) উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশু ও পাইলটসহ এখন পর্যন্ত অন্তত ৩১ জন নিহত হওয়ার পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১৭১ জন।

এদিকে, জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত মোট লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে ২০টি। এরমধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউট থেকে ১০টি, সিএমএইচ থেকে ৮টি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে ১টি এবং ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে ১টি।
এছাড়া, ৬ জনের মৃতদেহ শণাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এবং একজনের দেহাবশেষ সংগ্রহ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মৃতদের মধ্যে ২৫ জনই শিশু। বাকি দুজনের একজন শিক্ষক ও একজন পাইলট।
অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, "সিঙ্গাপুর মেডিকেলের সাথে এই হাসপাতালের এমওইউ আছে। প্রয়োজনে তাদের সহায়তা নেওয়া হবে।"
"এই মুহূর্তে রক্ত দেওয়ার জন্য অনেক ভিড় করার দরকার নাই। রক্ত সংগ্রহ করা হবে আজ (মঙ্গলবার)। আমাদের প্রস্তুতি যথেষ্ট আছে। নেগেটিভ গ্রুপের কয়েকজন থাকবে। ১০০ জনের বেশি ডোনারের দরকার হবেনা," যোগ করেন তিনি।

গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান। যুদ্ধবিমানটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আছড়ে পড়ে ওই স্কুল ভবনে। সে সময় শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ ক্লাস করছিল, আবার অনেকে ছুটি শেষে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বেলা ১টা ৬ মিনিটে রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবাহিনী ঘাঁটি এ কে খন্দকার থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বিমানটি স্কুল ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই আগুন স্কুল ভবনে ধরে যায়। দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, সন্তানের খোঁজে পাগলপ্রায় অভিভাবক-স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশ।
বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিস, সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব, আনসার, স্কাউটসহ স্বেচ্ছাসেবীরা; শুরু হয় উদ্ধারকাজ। উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান অনেকে। বিমানটির পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও মারা গেছেন।

হতাহতদের উদ্ধারের পর উত্তরার বিভিন্ন হাসপাতালসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যাওয়া হয়। হতাহতদের সন্ধানে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে যেতে দেখা যায় স্বজনদের।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আহতদের বেশির ভাগই দগ্ধ হয়েছে। তাদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। আজ মঙ্গলবার এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনও বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে।