মাইলস্টোন স্কুল ভবনে বিমান বিধ্বস্ত: বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৪৮ জন, স্বজনদের আহাজারি

রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন কলেজ ক্যাম্পাসের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে।
এ ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস কন্ট্রোল রুম থেকে ডিউটি অফিসার লিমা খানম বলেন, "উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে। ঘটনাস্থলে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং না হওয়া পর্যন্ত হতাহতের বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা সম্ভব নয়।"
এদিকে, দুর্ঘটনাস্থল থেকে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে রোগী আসা শুরু করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেখানকার আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) ডা. শাওন বিন রহমান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত অন্তত ৪৮ জন আহতকে বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য হাসপাতাল মিলিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ৭২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিউতে ৬ জন
হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ৬ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলো- নাফিস (৯), শামীম (১৪), সায়েম ইউসুফ, মাহিয়া, আফনান ফায়াজ ও সামিয়া। এর মধ্যে নাফিসের শরীরের ৯৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
এছাড়া নওরিন (৯) ৩০ শতাংশ, মাসুমা (৯) ৬০ শতাংশ, তাসনিয়া ৩৫ শতাংশ, অয়ন (১৪) ৬০ শতাংশ, মাহতাব (১৩) ৮০ শতাংশ, মাকিন (১৫) ৬২ শতাংশ, আরিয়ান (১১) ৫৫ শতাংশ, আরিয়ান (১৫) ১০০ শতাংশ, রোহান (১৯) ৫০ শতাংশ, মেহরিন ১০০ শতাংশ, নাজিয়া (১৩) ৮০ শতাংশ, চান মিয়া (৪০) ৪০ শতাংশ, আবির ২০ শতাংশ, মাসুম (৩২) ৬০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান বার্ন ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হয়েছেন।
এদিকে, বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগের সামনে স্বজনদের ভিড় বাড়ছে, সবাই স্কুল শিক্ষার্থীদের বাবা-মা।
কয়েক মিনিট পর পর একটা করে অ্যাম্বুলেন্স ঢুকছে বার্ন ইনস্টিটিউটে আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে যাচ্ছে চারিদিকের পরিবেশ।
'আমার ছেলের সারা শরীর পুড়ে গেছে', কাঁদতে কাঁদতে বলেন ক্লাস ফোরের শিক্ষার্থী আরিয়ানের মা আঁখি। তিনি বলেন, 'আমার ছেলে কয়দিন ধরে অসুস্থ, আমি স্কুলে যেতে দেইনি।'
১১ বছরের আরিয়ান ক্লাস ফোর বাংলা ভার্সনের শিক্ষার্থী। অগ্নিদগ্ধ হয়ে তার মাথার চুলও পুরে গেছে। উত্তরার দিয়াবাড়ি তাদের বাসা।
অগ্নিদগ্ধ হওয়া ১৫ বছর বয়সী নাবিল ক্লাস সেভেনে পড়ে, ইংলিশ ভার্সনে। উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে ১৫ নম্বর রোডে তাদের বাসা।
নাবিলের মা নাছিমা বলেন, 'স্কুল ছুটির পরে মানিকেরা খেলতেছিলো মাঠে তখন বিমান ব্লাস্ট হয়েছে। আমার ছেলের ফেস বোঝা যাচ্ছে। ওকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেয়া হয় তখন আমি তাকে এক বার দেখেছি, সারা শরীর পুরে গেছে৷ আল্লাহ আমার ছেলেকে বাঁচিয়ে দাও।'
এদিকে, মাইলস্টোন স্কুলের বাংলা ভার্সনের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ফাতেমার পিতা লিয়ন মির সন্তানের খোঁজ চেয়ে আহাজারি করছেন। ফেসবুক লাইভে এসে তিনি সন্তানের সন্ধান চেয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজ আইডিতে দেওয়া লাইভে এ আহ্বান জানান তিনি। লিয়ন মির একটি টেলিভিশনে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
আহত তিনজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে নিয়ে এসেছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, 'তিনজন বাচ্চাকে আমি নিয়ে এসেছি। একজনের জ্ঞান নাই। বাবা-মায়ের নাম, এমনকি নিজের নামও বলতে পারেনা।'
মাইলস্টোন স্কুলের ক্লাস সেভেনের শিক্ষার্থী আফিফ হোসেনের মামা বলেন, 'আমার ভাগ্নের মুখ, ব্যাকবোন (মেরুদণ্ড) পুরোটা পুড়ে গেছে। তবে কথা বলতে পারছে। আফিফের বাবা নাই, কি কষ্ট করে বড় হচ্ছে বাচ্চাটা। অনেকের অবস্থা খুবই খারাপ। আমার ড্রাইভার জোর করে নিয়ে আসছে ওকে। ১১ টার দিকে আমরা জানতে পারি এ দুর্ঘটনার সময়। সেখান থেকে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেয়া হয়। তারপর বার্ন ইনস্টিটিউটে আনা হয়েছে।'
আইএসপিআর সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজেআই প্রশিক্ষণ বিমানটি আজ (২১ জুলাই) বেলা ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করে।
উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বেলা ১টা ১৮ মিনিটে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় বলে জানানো হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের এক ক্ষুদে বার্তায়। খবর পেয়ে ১টা ২২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান।