এনসিপির কোনো সদস্যের দিকে চোখ রাঙালে দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে: বরিশালে নাহিদ ও হাসনাতের হুঁশিয়ারি

যদি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো সদস্যের দিকে কেউ চোখ রাঙায়, তবে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। একই কথার পুনর্ব্যক্ত করেছেন সংগঠনটির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহও।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বরিশাল নগরীর ফজলুল হক এভিনিউতে আয়োজিত এক সমাবেশে এমন মন্তব্য করেন তারা। 'দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা' স্লোগানে আয়োজিত এই কর্মসূচির আয়োজন করে এনসিপির বরিশাল ইউনিট। রাত নয়টা থেকে শুরু হওয়া সমাবেশ চলে রাত দশটা পর্যন্ত।
আগামী ৩ আগস্ট ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' আদায়ের লক্ষ্যে আয়োজিত সমাবেশে বরিশালের সর্বস্তরের মানুষকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, '৫ আগস্ট আমাদের লক্ষ্য ছিলো গণভবন, এবার আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সংসদ ভবন। তাই জেলা, উপজেলা—সর্বত্র এনসিপির ইউনিট গঠন করে দলকে গতিশীল করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা গণ-অভ্যুত্থানের পরে বলেছিলাম ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু আমরা দেখছি রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে রক্তের দাগ লেগে রয়েছে। নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করছে। সবার হাতেই রক্ত লেগে রয়েছে।'
'আমরা রাজনৈতিক সহিংসতামুক্ত বাংলাদেশের সংস্কৃতি দেখতে চেয়েছিলাম, চাঁদামুক্ত অর্থনীতি দেখতে চেয়েছিলাম। তরুণ প্রজন্মের শক্তি এখনও ঘুমিয়ে যায়নি। তারা রাজপথে এসেছে। বাংলাদেশকে চাঁদাবাজ, দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত করেই আমরা ঘরে ফিরব ইনশআল্লাহ,' যোগ করেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতে বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, 'মোরা দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা শুরু হরছি। মোগো লগে বরিশালবাসী আছেনতো।'
সাবেক এ উপদেষ্টা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও যোগেন্দ্রনাথ মণ্ডলের রাজনৈতিক ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, 'এই দুই বরিশালের কৃতিসন্তানের রাজনীতির পুনরুত্থান ঘটাবে এনসিপি।'
সমাবেশে দলের দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, 'নির্বাচন কমিশনারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচন কমিশনারের রিমোট কন্ট্রোল কি ভারত থেকে, না কি সেনাবাহিনী থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়? তারা [নির্বাচন কমিশনার] শাপলা প্রতীক দিতে কেন গড়িমসি করছে?'
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, নৌকাকে ব্যালট থেকে বাদ দিতে হবে। এই নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়।
সরকারি দলে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে হাসনাত বলেন, 'এক সময় ভোট চোর বললে একটি দলের গায়ে লাগত, এখন চাঁদাবাজ বললে আরেক দলের গায়ে লাগে। দেশে এখন একটা কথা চালু হয়েছে—"যদি থাকতে চাও জিন্দা, দিতে হবে চান্দা।" এই চাঁদাবাজদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে।'
বিএনপির মহাসচিবকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'মির্জা ফখরুল সাহেব বলেছেন—তারেক রহমানকে নিয়ে কথা বললে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হয়। রাষ্ট্রের উর্দ্ধে কোনো ব্যক্তি বা দল নয়।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের দল ক্যান্টনমেন্ট থেকে জন্ম নেয়নি, সংকট থেকে জন্ম নিয়েছে। তাই যেকোনো সংকট মোকাবিলা করার জন্য আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি। এনসিপির কোনো সাধারণ সদস্যের গায়েও কেউ হাত তুললে তার দাঁতভাঙা জবাব দেওয়া হবে।'
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা, কেন্দ্রীয় নেত্রী নাহিদা সরোয়ার নিভা, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজিনা, ফয়সাল মাহমুদ শান্তসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।