আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখকদের কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে সেবাগ্রহীতারা

ঢাকার আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দলিল লেখকদের একাংশের চলমান কর্মবিরতিতে বিপাকে পড়েছেন সেবাপ্রার্থীরা। প্রায় এক মাস ধরে চলা এই কর্মবিরতির ফলে দলিল নিবন্ধনসহ জরুরি নানা সেবা পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ গ্রহণ, দুর্নীতি ও অসম্মানজনক আচরণের অভিযোগ এনে তার পদত্যাগের দাবিতে গত ১৭ জুন থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন দলিল লেখকদের একটি অংশ। তারা জানান, সাব-রেজিস্ট্রার ঘুষ ছাড়া দলিল গ্রহণ করেন না এবং দলিল লেখকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন।
এদিকে কর্মবিরতির কারণে শুধু ভোগান্তিই নয়, কর্মবিরতি চলাকালীন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে ২৩ জুন একটি বেসরকারি ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট রিলেশনশিপ অফিসার আমির হোসেন অফিসে বন্ধক দলিল সম্পন্ন করতে গেলে তার ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে। দলিল লেখক মোশাররফসহ ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়াও একাধিক ভুক্তভোগী ও সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কর্মবিরতি পালনকারীদের অনেকে তাদের পরিচিতদের সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম বন্ধ বলে জানিয়ে দিচ্ছেন। ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেবা প্রত্যাশীদের। যদিও অনেক সেবা প্রত্যাশী নিজ উদ্যোগে বাইরে থেকে দলিল লিখিয়ে এনে দলিল সম্পাদনের কাজ করছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
আশুলিয়া সাব রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছরের মার্চে খায়রুল বাশার ভূঁইয়া কার্যালয়টিতে সাব রেজিস্ট্রার পদে দেন। যোগদানের পর তিনি দলিল নিবন্ধনে জমির শ্রেণি অনুসারে সরকার নির্ধারিত কর আদায় করতে গেলে দলিল লেখকদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে তার মতবিরোধ তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, খাজনা ছাড়া দলিল নিবন্ধন, ভুয়া রশিদ ব্যবহার, উৎসে কর ফাঁকি দিয়ে রেজিস্ট্রির মত অনিয়মের বিরোধিতা করাতেই এই মতবিরোধ তৈরি হয়।
ভোগান্তির বিষয়ে সাভার সেন্ট্রাল মডেল কলেজের শিক্ষক আলতাব হোসেন জানান, কলেজের নামে হোসেন আলী নামে এক ব্যক্তি ১০ শতাংশ জমি দান করতে চাইলে সেই জমির নিবন্ধনসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সপ্তাহখানেক আগে আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে যান তিনি। কিন্তু দলিল লেখকরা কর্মবিরতি পালন করায় সেখানে দলিল লেখাতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের পরামর্শে সাভার থেকে দলিল লিখিয়ে নিয়ে গিয়ে পুনরায় রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়েছে তাকে।
যোগাযোগ করলে আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সাব-রেজিস্ট্রার প্রচণ্ড রকমের স্বেচ্ছাচারী—ঘুষ ছাড়া তিনি দলিল করতেই চান না। আমাদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও অসম্মান করে কথা বলেন। এসব কারণে চলতি বছরের ১৭ জুন থেকে তার পদত্যাগ দাবি করে আমরা কর্মবিরতি পালন করছি। জেলা রেজিস্ট্রারসহ বিভিন্ন জায়গায় স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।'
সেবাগ্রহীতাকে মারধরের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, '২৩ তারিখে আইজিআর অফিসসহ বিভিন্ন দপ্তরে আমরা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম। সেদিন একটি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা একটি দলিল মর্টগেজ করতে এসেছিলেন। সেখানে আমাদের দলিল লেখকরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ ছিল। পরে তার কাছে সম্ভবত জানতে চাওয়া হয়েছিল তিনি কেন এসেছেন এবং সম্ভবত তিনি সেটি গোপন করেছিলেন। পরে বিষয়টি জানার পর সম্ভবত উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে। মারধর আমি বলব না।'
'আমরা বিষয়টি জানার পর ব্যাংকটিতে গিয়ে ব্যাংক ম্যানেজারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছি, পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আমরা তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। আন্দোলনের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে নীতিগত একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে,' যোগ করেন তিনি।
ভুয়া খাজনার রশিদের মাধ্যমে দলিল সম্পাদনের চেষ্টার অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুয়া বলেও দাবি করেন আলমগীর হোসেন।
এবিষয়ে সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভূঁইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমার কার্যালয় থেকে পুরোদমে মানুষ সেবা পাচ্ছে। আজও (মঙ্গলবার) ইতোমধ্যে ৬টি দলিল আমি রেজিস্ট্রি করেছি। কাজ হচ্ছে, কিন্তু সমস্যাটা গুটি কয়েকজনের। তারা অন্যান্যদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছেন, মারধরের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে। গুটি কয়েকজনের অযৌক্তিক, অন্যায় স্বার্থের জন্য সকলের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।'
বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অবগত জানিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে আমরা আমাদের অবস্থান থেকে ব্যবস্থা গ্রহন করব। এছাড়াও সেবাগ্রহীতারা হয়রানির শিকার হলে থানায়ও অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।'