বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগ বাড়াতে উন্নত অবকাঠামো চান চীনের বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশের কর সুবিধা ও নানা প্রণোদনা কাজে লাগাতে দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে বিনিয়োগে (জয়েন্ট ভেঞ্চার) আগ্রহ প্রকাশ করেছেন চীনা বিনিয়োগকারীরা।
তবে তারা বলেছেন, যৌথ উদ্যোগ সফল করতে বন্দর, জ্বালানি ও পরিবহন খাতসহ সার্বিক অবকাঠামো আরও উন্নত করতে হবে। পাশাপাশি বাণিজ্য নীতিমালা সহজীকরণ এবং কারখানার জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার দিকেও নজর দিতে বলছেন তারা।
গতকাল (৯ জুলাই) ঢাকার গুলশানে চীনা এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ আয়োজিত 'চীন-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন কো-অপরেশন' শীর্ষক সেমিনারে যৌথ বিনিয়োগ ও সহযোগিতার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।
প্রতিবেদনটিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সড়ক ও সেতু, বন্দর, বস্ত্র ও পোশাক, বাণিজ্য ও সেবা, রেল, বেসামরিক বিমান চলাচল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, এবং পানি ও পরিবেশ—এই খাতগুলোর বর্তমান বাজার প্রবণতা, বিনিয়োগের সুযোগ-চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনার বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও চীনের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
চীনা এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫০টিরও বেশি চীনা কারখানা পরিচালিত হচ্ছে, যেখানে দুই লাখেরও বেশি মানুষ কর্মরত।
প্রতিবেদনের কৌশলগত সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি শীর্ষস্থানীয় কারখানাগুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলে দেশের কর সুবিধা কাজে লাগাতে আগ্রহী চীনা বিনিয়োগকারীরা। পাশাপাশি, তারা 'বাংলাদেশ-চীন গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্ল্যাটফর্ম' স্থাপনেও আগ্রহ দেখিয়েছে।
তবে এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বন্দর আধুনিকায়ন, উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ও জ্বালানি অবকাঠামো গড়ে তোলা, উপযোগী বাণিজ্যনীতি প্রণয়ন এবং শিল্প খাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা।
আলোচনায় চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, "গত আগস্টের পর থেকে আগের একই সময়ের তুলনায় বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বেড়েছে।" তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে চীন তার বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আরও বাড়াবে।"
চীনা রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, "দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সহযোগিতা এখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।"
বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, "সম্ভবত চীনই বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হতে যাচ্ছে।"
তিনি আরও জানান, টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
'ত্রিপাক্ষিক সহযোগিতা কোনো তৃতীয় দেশের বিরুদ্ধে নয়' — চীনা রাষ্ট্রদূত
চীন, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি চীনের কুনমিংয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, "এই তিন দেশের মধ্যে সহযোগিতা খোলামেলা ও স্বচ্ছ এবং এটি কোনো তৃতীয় দেশকে লক্ষ্য করে নয়।"
তিনি বলেন, "আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছি… তাই আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমাদের এই সহযোগিতা পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে, এবং এটি একটি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া। এটি কোনো তৃতীয় দেশের বিরুদ্ধে নয়।"
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন আরও বলেন, "এই সহযোগিতার লক্ষ্য হচ্ছে শান্তিপূর্ণ সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের জনগণের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা।"
তিনি জানান, তিন দেশ ইতোমধ্যে বাণিজ্য, শিল্প, শিক্ষা, পরিবেশ সুরক্ষা, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও সংস্কৃতি–সহ ১২টি খাতে যৌথ সহযোগিতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ প্রসঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, "আমি বিশ্বাস করি, এ বিষয়টি মোকাবিলায় বাংলাদেশের যথেষ্ট উপায় ও সক্ষমতা রয়েছে।"
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতিমালা রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, "বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মনীতি রক্ষায় চীন ও বাংলাদেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।"
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একটি প্রতিনিধি দল শিগগিরই চীন সফরে যাচ্ছে—এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে চীনা রাষ্ট্রদূত স্পষ্ট করে বলেন, এ সফরের সঙ্গে বাংলাদেশের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, "জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করবে।"
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "নির্বাচন বাংলাদেশের জনগণের বিষয়। এটি আলোচনার অংশ নয়।"