তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ সুপ্রিম কোর্টের

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে গত ১৭ ডিসেম্বর হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। আজ (৮ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে এই ১৩৯ পৃষ্ঠার রায় প্রকাশ করা হয়।
গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছিল।
এই বিষয়ে করা দুটি রিট আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালত পর্যবেক্ষণে বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল হচ্ছে, কারণ এটি গোটা জাতির ইচ্ছা।'
২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনগুলো বিতর্কিত বলে সমালোচিত হয়েছিল। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসেন। বিরোধী দলগুলো এই নির্বাচন বর্জন করে এবং শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের আওতায় আসে।
গত বছরের ৫ ডিসেম্বর বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর বেঞ্চ শুনানি শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন।
গত বছরের ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
১৯ আগস্ট হাইকোর্ট এই রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে সরকারকে জানাতে বলেন কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করা হবে না।
এরপর ৩০ অক্টোবর, ৬, ৭, ১০, ১৩, ১৪, ২০, ২৫, ২৭ ও ২৮ নভেম্বর এবং ১ ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন দিনে এই বিষয়ে বিস্তারিত শুনানি হয়।
এছাড়াও, গত বছরের ২৯ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধা ও নওগাঁর রাণীনগরের মোফাজ্জল হোসেন ১৫তম সংশোধনীর ১৭টি ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে রিট করেন।
সেই রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট একটি পৃথক রুল জারি করে জানতে চায় কেন ওই ধারা/বিধানগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না। এই রুলের ওপর শুনানি হয় ৪ ডিসেম্বর।
এ বিষয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং সুপ্রিম কোর্টের কিছু আইনজীবীও আদালতে পঞ্চদশ সংশোধনীর বিরোধিতা ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ২০১১ সালের ৩০ জুন সংসদে পাস হয় এবং ৩ জুলাই গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
এই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় এবং সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়।
এছাড়া, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলকে রাষ্ট্রদ্রোহ হিসেবে গণ্য করে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়, ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় এবং জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।
এছাড়া, সংশোধনীর মাধ্যমে নির্বাচনের সময়সীমাও পরিবর্তন করা হয়—সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত করা হয়, যেখানে আগে মেয়াদ শেষের পর ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা ছিল।