উৎপাদন খরচের চেয়ে দাম কম, লোকসানে বন্ধ হচ্ছে শত শত খামার: পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন

বাজারে ডিম ও মুরগির দাম উৎপাদন খরচের নিচে নেমে যাওয়ায় প্রতিদিনই দেশে শত শত খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএ) সভাপতি সুমন হাওলাদার।
সোমবার (৭ জুলাই) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, গত ছয় মাসে অন্তত ১০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি খামার বন্ধ হয়েছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা হলেও খামার পর্যায়ে তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। সোনালি মুরগির কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, অথচ বিক্রি করতে হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকায়। একটি ডিমের উৎপাদন খরচ ১০ টাকা হলেও খামারিরা তা বিক্রি করছেন ৬ থেকে ৮ টাকায়। ফলে গত ৫–৬ মাস ধরে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির প্রতিকেজিতে গড়ে ৩০–৫০ টাকা, আর প্রতিটি ডিমে ২–৩ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
সুমন হাওলাদার বলেন, "যখন বাজারে দেখি হঠাৎ করে ডিম ও মুরগির দাম কমে গেছে, তখন সাধারণ ভোক্তা খুশি হন। কিন্তু আমরা প্রশ্ন করি, এই স্বস্তি আসলে কি স্থায়ী, নাকি ভবিষ্যতের অস্বস্তির সূচনা? প্রান্তিক খামারিদের পুঁজি, শ্রম আর স্বপ্ন ধ্বংস হচ্ছে।"

তিনি আরও বলেন, "একটি খামার বন্ধ মানে শুধু উৎপাদন কমে যাওয়া নয়, বরং একটি পরিবার আয় হারাচ্ছে, একজন তরুণ বেকার হচ্ছে, একটি সংসার ঋণে ডুবে যাচ্ছে। অনেক খামারি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন, কেউ কেউ দেউলিয়া হয়ে গেছেন। এই অবস্থা আর চলতে পারে না।"
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রান্তিক খামারিদের টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা জরুরি। এজন্য বিপিএ ১০ দফা দাবি উত্থাপন করেছে, যার মধ্যে রয়েছে—জাতীয় পোল্ট্রি শুমারি ও ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি; সব খামারি ও ডিলারকে উদ্যোক্তা আইডি কার্ড প্রদান; খামারিদের নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, প্রশিক্ষণ ও সরকারি নীতিনির্ধারণী মিটিংয়ে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা; জামানতবিহীন স্বল্পসুদের ঋণ ও সরকারি নীতিগত সহায়তা; ফিড, ওষুধ ও ভ্যাকসিনে স্বচ্ছতা ও সরকারিভাবে ফিডমিল ও হ্যাচারি স্থাপন; প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও ল্যাব সুবিধা সম্প্রসারণ এবং জেলা-উপজেলায় কোল্ড স্টোর স্থাপন; স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ন্যায্যমূল্য ও বাজার সংযোগ নিশ্চিত; নিরাপদ ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদনের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি; সংকটকালে প্রণোদনা ও ভর্তুকি ব্যবস্থা এবং কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নীতিমালা প্রণয়ন ও জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন বোর্ড গঠন ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক মেজবাউল হক মারুফ এবং বিভিন্ন জেলার প্রান্তিক খামারিরা।