ভোলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে মারধর, স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায় চাঁদা না পেয়ে স্বামীকে মারধরের পর স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় শ্রমিকদল ও ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন।
রোববার (২৯ জুন) দুপুরে তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কামারপট্রি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
তজুমদ্দিন থানা পুলিশ গতকাল (৩০ জুন) মামলাটি নথিভুক্ত করেছে। এরপর ভুক্তভোগী নারীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভোলার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মামলায় তজুমদ্দিন উপজেলা শ্রমিকদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন, ফরিদের সহযোগী আলাউদ্দিন, তজুমদ্দিন সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাসেলসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী নারীর স্বামী ও মামলার বাদী বলেন, তিনি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন, আর তার দ্বিতীয় স্ত্রী তজুমদ্দিনে বসবাস করেন।
তিনি বলেন, 'কিছুদিন আগে আমি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে এলে শনিবার (২৮ জুন) রাতে দ্বিতীয় স্ত্রী আমাকে ফোন করে কথা বলার জন্য তজুমদ্দিন বাজার এলাকায় তার বাড়িতে যেতে বলেন। সেখানে পৌঁছানোর পর শ্রমিকদল নেতা ফরিদ উদ্দিন, তার সহযোগী আলাউদ্দিন, ছাত্রদল নেতা রাসেলসহ ৫ থেকে ৭ জন আমাকে আটকে মারধর করেন। এ সময় দ্বিতীয় স্ত্রী আমার সাথে সংসার করবে না জানিয়ে তারা আমার কাছে ৪ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।'
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, 'টাকা না পেয়ে আমাকে আটকে রেখে এসএস পাইপ দিয়ে মারধর করে। খবর পেয়ে রোববার বেলা ১১টার দিকে আমার প্রথম স্ত্রী সেখানে পৌঁছে তাদেরকে কিছু টাকা দেন। টাকার অঙ্ক তাদের দাবিকৃত চাঁদার চেয়ে কম হওয়ায় তারা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে আমার প্রথম স্ত্রীসহ আমাকে ফের মারধর করে একটি ঘরে আটকে রাখেন।'
বাদী বলেন, ওইদিন বিকেলে চা খাওয়ানোর কথা বলে তাকে ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়।
'আমি ফিরে এসে দেখি ঘরটির দরজা বন্ধ। বাইরে থেকে অনেকক্ষণ জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিলে ভেতর থেকে একজন বেরিয়ে দরজা খুললে ভেতরে ঢুকে দেখি আমার প্রথম স্ত্রী কাঁদছে। পরে জানতে পারি, তাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে আসামিরা।'
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ঘটনাটি কাউকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেয় অভিযুক্তরা। পরে তার স্ত্রী একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের দুজনকে উদ্ধার করে তজুমদ্দিন থানায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে মামলা দায়ের করা হয়।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অভিযোগের বিষয়ে আসামিদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম মোস্তফা মিন্টু বলেন, 'এ ঘটনায় বিএনপির কোনো অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
ভোলা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা.আমিনুল ইসলাম বলেন, 'সোমবার রাতে ভুক্তভোগী ওই নারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।'
'ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ভোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে,' বলেন তিনি।
মামলা দায়েরের পর বাদীর দ্বিতীয় স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।